প্রতিশোধ! ঘোর প্রতিশোধ!! উয়েফা সুপারকাপে প্রায় এক দশক আগে যে সেভিয়ার কাছে পরাজয় স্বীকার করেছিলেন লিওনেল মেসিরা সেই সেভিয়াকেই এক মহাকাব্যিক ম্যাচে পরাজিত করে সেই উয়েফা সুপারকাপ ট্রফি ঘরে তুলল কাতালানরা। গত মঙ্গলবার তিবিলিসির বরিস ডাইনামো অ্যারিনায় ৫-৪ গোলে সেভিয়াকে হারিয়ে উয়েফা সুপারকাপে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো বার্সেলোনা। সেই সঙ্গে বছরের সম্ভাব্য ছয়টা শিরোপার সবকটাই ঘরে তোলার সুযোগটা জিইয়ে রাখলো। লা লিগা, কোপা দেল রে, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আর উয়েফা সুপারকাপ হলো। বাকি রইলো কেবল স্প্যানিশ সুপারকাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।
লিওনেল মেসি ফিরলেন। আর ফেরাটা এমন দুর্দান্তই হলো যে কাতালান ভক্তরা বহুদিন মনে রাখবে। লিওনেল মেসি সংখ্যাগত দিক থেকে এরচেয়ে ভালো ম্যাচ বহু খেলেছেন। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো আসরে এক ম্যাচে তার পাঁচ গোলের রেকর্ডও আছে। কিন্তু গত মঙ্গলবারের ম্যাচটা অন্য কারণে মেসি ভক্তদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে। মেসি দুইটা গোল করেছেন ম্যাচের ৭ ও ১৫ মিনিটে। মূলত তার ডাবলেই ম্যাচে ফিরে বার্সেলোনা। তবে এই দুইটা গোল অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ ছিলো না। মানব প্রাচীর ভেদ করে ফ্রি কিক থেকে করা দুটি গোল মেসির ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরার তালিকায় স্থান পাবে নিঃসন্দেহে। মেসির এমন রূপ দেখে এমনকি প্রতিপক্ষ কোচও বলে দিলেন, মেসিই সর্বকালের সেরা। কেবল ওই দুটি গোল করলেই হয়তো মেসিকে এমনটা বলা হতো না। বার্সেলোনার বিদায়ী নায়ক পেদ্রো রদ্রিগেজ যে জয়সূচক গোলটা করেছেন তার কারিগর তো মেসিই। সবমিলিয়েই গত মঙ্গলবার মেসি হয়ে রইলেন নায়ক।
অবশ্য মেসির এমন আলোকিত পারফরম্যান্সের পরও গত মঙ্গলবার বার্সা ভক্তরা আরও একজনের দিকে দৃষ্টি রেখেছিলো। ম্যাচের ৯৩ মিনিটে মাঠে নামার পর পেদ্রোকে মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল করেনি ভক্তরা। আর তিনিও ভক্তদের দারুণ এক শিরোপা উপহার দিলেন। ম্যাচ শেষে চোখের জলে সিক্ত পেদ্রো সোজা-সাপ্টাভাবে বলে দিলেন, 'আমি নূ্য ক্যাম্প ছাড়তে চাইনি। কিন্তু যেতে হচ্ছে। এখানে অর্থের কোনো ব্যাপার নেই। আমি আরও বেশি সময় খেলতে চাই বলেই চলে যাচ্ছি।' মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের ভীড়ে পেদ্রো বড্ড বেমানান। অধিকাংশ ম্যাচেই তিনি প্রথম একাদশে স্থান পান না। তবে অন্য যে কোনো ক্লাবে পেদ্রো থাকবেন কোচের প্রথম পছন্দ।
এদিকে উয়েফা সুপারকাপে বার্সেলোনা একটা রেকর্ডই গড়ল। বার্সেলোনার ৫-৪ ব্যবধানের জয়টা সুপারকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গোলের ম্যাচ হয়ে থাকলো। এর আগে কেবল জুভেন্টাসই এরচেয়ে বেশি গোল করেছিলো। পিএসজিকে দুই লেগ মিলিয়ে হারিয়েছিলো ৯-২ ব্যবধানে। এক লেগের ফাইনালে এখনো পর্যন্ত বার্সেলোনা-সেভিয়া ম্যাচটাই সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ। এমন একটা জয়ের পরও সন্তুষ্ট নয় বার্সেলোনা। আর্জেন্টাইন তারকা মাসকারেনো বলেছেন, 'শিরোপা পেয়ে আমরা নিঃসন্দেহে দারুণ আনন্দিত। তবে আমাদেরকে আরও ভালো খেলতে হবে।'