২০ আগস্ট, ২০১৮ ০৬:২৭

প্রধানমন্ত্রী-রাজনীতিবিদ ছাড়াও আরও যে পরিচয় ছিল বাজপেয়ীর!

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী-রাজনীতিবিদ ছাড়াও আরও যে পরিচয় ছিল বাজপেয়ীর!

ফাইল ছবি

“তুমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হতে পারো, তবে কোনোদিন সাবেক কবি হতে পারবে না” কথাটা যার, তিনি গত ৯ সপ্তাহ ধরে মুম্বাইয়ের এইমস হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে হেরে গেছেন। তিনি অটল বিহারী বাজপেয়ী।

প্রধানমন্ত্রী, ভারতের একজন সফল রাজনীতিবিদ, ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ এসবের বাইরেও তার আরও একটা পরিচয় ছিল। ছন্দের মাঝে অন্তমিল খুঁজে পাওয়ার অমোঘ ক্ষমতা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। আপাত শান্ত কিন্তু রাজনৈতিক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটির কলম সাক্ষী থেকেছে তার কাব্য প্রতিভার। তার লেখায় বারবার ফুটে উঠেছে জীবন-মৃত্যু থেকে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ।

তিনি তার 'আও ফিরসে দিয়া জ্বালায়ে' কবিতায় বলেছিলেন, "দুপুরবেলা সন্ধ্যা নামে যদি/ সূর্য যদি পরাজিত ছায়ার কাছে/ মনের মধ্যে যে আগুন আছে/ তাই দিয়ে আবার প্রদীপ জ্বালো।" তার কবিতা প্রমান করে তার জাঁকজমকহীন জীবনযাত্রার।

তার কবিতায় ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনা শোনা গেছে। তিনি বলেছেন, "হে প্রভু , আমায় এমন উচ্চতায় উঠতে বলো না / যেখানে আমি অন্য কিছুকে আলিঙ্গন করতে ভয় পাই/ এত উচ্চতায় আমায় কোনোদিন পাঠিও না।"

তিনি যখন বিভ্রান্ত তখনও তার কলম মুক্তা ঝরিয়েছে। তিনি বলছেন,  "এমন কোনও কাজে যেখানে তেমন লাভ নেই/ যা কিছু পেয়েছি আমি দিনকয়েক আগে/ আমি কি সব মুহূর্তের হিসেব নেব?/ নাকি যেমন করে যায় সব তেমন করে যাবে…/ আমি কোন পথ নেব?"

তিনি মনে করতেন কেন আমরা সবাই জীবনকে সঠিকভাবে যাপন করতে পারি না। তিনি তার কবিতায় জানিয়েছেন। "কেন আমি প্রতিটা মুহূর্ত পুরোপুরি বাঁচি না? কেন আমি প্রতিটা সৌন্দর্যের কণায় কণায় উপভোগ করতে পাড়ি না?/ থাকা আর না থাকার মধ্যেখানের চাকা ঘুরবে শেষ পর্যন্ত/ তেমনই আমাদের ভ্রম, আমরা আছি, আমরা থেকে যাব।" সময়ের বেড়া পেরিয়ে তাঁর লেখা গুলো সবসময় সমান প্রাসঙ্গিক। তিনিও থেকে যাবেন মানুষের মধ্যে।

বাজপেয়ীর অটল মনোভাবও ফুটে ওঠে তার লেখায়। তিনি লিখেছিলেন, "সবকিছুর একটা কারণ থাকে,তখন আমরা থামতে পারি/ আমরা সেখানে ভাঙতে পারি, কিন্তু নুইতে পারিনা।"

অন্য রাজনীতিকদের মতো সমালোচনায় বিচলিত হতেন না তিনি। নিজেকে অন্যের চোখ দিয়ে দেখে বিচার করতে জানতেন তিনি। তিনি জানান, "আমি আমায় অন্যের চোখ দিয়ে দেখতে পারি/আমি চুপ নেই, আমি গানও গাইছি না।"

জীবন-মরণের সীমানা ছড়ায়ে তিনি যখন আজ বহুদূরে তাঁর অমোঘ আত্ম-দর্শন বিশ্ববাসীকে ভাবায়। তিনি বলেছিলেন, "মৃত্যুর বয়স কত?/ হয়ত একমুঠো স্মৃতি/ জীবন একটা যাত্রা/ এক বা দুদিনেরও হতে পারে।"

ভারত বহু সফল নেতা পেয়েছে। তবে নেতৃত্ব আর কবিত্বের এমন মেল বন্ধন হয়ত এর আগে দেখেনি। তিনি আর নেই, তবে তার কবিতা তাকে কোনোদিন স্মৃতির অতলে নিয়ে যাবে না।
   

বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর