পিনপতন নীরবতার মধ্যে হঠাৎ কোনো শব্দ হলে অনেকেই চমকে ওঠেন। এমনটিই স্বাভাবিক। তবে যারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও নানা কারণে মাঝেমধ্যেই চমকে ওঠেন, তাদের জন্য শতভাগ সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। শরীর সুস্থ থাকার প্রধান শর্তই হচ্ছে মনের সুস্থতা। ভয় মানুষকে কখনোই পরিপূর্ণ সুস্থ থাকার অনুমতি দেয় না। অনেক সময়ই ভয়ের কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এই কারণে। ভয়ের ফলে ক্যান্সার, শরীরে অবসাদগ্রস্ততা ইত্যাদি রোগ দেখা দিতে পারে। ভয়ঙ্কর সিজোফ্রেনিয়া কিংবা ফোবিয়া রোগও দেখা দিতে পারে ভয়ের কারণে। দেখা দিতে পারে মানসিক ভারসাম্যহীনতা। এসব কারণে নিজের তো বটেই পরিবারের জীবনটাও অসহ্য হয়ে যায়। এ জন্য ভয় থেকে মুক্ত থাকা খুবই প্রয়োজন। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য তো বটেই, পরিবারকে ভালোভাবে বাঁচতে সাহায্য করার জন্যও এটি প্রয়োজন।
ভয় অনেক রকমের হতে পারে। কেউ হয়তো কোনো অপরাধ করে ভয়ে আছে। কেউ বা আর্থিক কষ্টে থাকার কারণে ভয়ে আছে। কেউ বা নতুন মানুষের সামনে যেতে ভয় পাচ্ছে। কাউকে নতুন পরিবেশ ভয় দেখাচ্ছে। এভাবে অনেক কারণেই মানুষ ভয়ে থাকতে পারে। তবে ভয় সাধারণত ছোটবেলা থেকেই মনের কোনে বাসা বাঁধে। বিশেষ করে যে শিশুদের মায়েরা ছোটবেলায় ভূত কিংবা সাপের গল্প শোনায়, তারাই বড় হয়ে সেই ভয় থেকে মুক্ত হতে পারে না। তবে বড় হওয়ার পরও অনেকের মনে ভয় বাসা বাঁধতে পারে। কেউ যদি বড় ধরনের কোনো অ্যাকসিডেন্টে পড়ে, কারও সামনে ভয়াবহ ধরনের কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে, এ ছাড়া মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটলেও ভয় দেখা দিতে পারে।
ভয় থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করা প্রতিটি মানুষেরই তীব্রভাবে চেষ্টা করা উচিত। যদিও বিষয়টি এতটা সহজ নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, 'মুক্ত কর ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর নিজেরে কর জয়'। এই কবিতা পড়ে অনেক সময় ভয় দূর করার চেষ্টা করেন অনেকে। ভয় মূলত দুঃখ থেকেই আসে। রবিঠাকুর বলেছেন, 'দুঃখ যদি না পাবে তো দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে'। সুতরাং ভয় পেতে পেতেই ভয়কে দূর করতে হবে। ভয় পাই বলে ভয়ের কাছে যাওয়া যাবে না, এমন মনোভাব নিয়ে যারা চলাফেরা করেন, উপরে বর্ণিত কোনো সমস্যা থেকেই তারা মুক্ত হতে পারবেন না। ভয়মুক্ত চলতে হলে ভয়কে জয় করতে হবে। আর এ জন্য ভয়ের কাছে যাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবেই সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব।