বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে বাংলাদেশের টার্গেট সেমিফাইনাল। অধিনায়ক মামুনুল বা কোচ লোডডিক ক্রুইফও একই কথা বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের এর চেয়ে বেশি কি সামর্থ্য নেই। আগে বলা হচ্ছিল জাতীয় দলগুলো টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। না, আসছে অনূর্ধ্ব-২৩ বা অলিম্পিক দলগুলো। সে তুলনায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের শক্তি কোনো অবস্থায় কম নয়। তাহলে টার্গেট শিরোপা বললে খুব কি বেশি বলা হতো। 'এ'-গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা। ধারণা করা হচ্ছে প্রথম ম্যাচে ফলাফল যাই হোক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেয়ে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করবে। ক্রিকেটের মতো অনিশ্চয়তার খেলা না হলেও ফুটবলেও বড় ধরনের অঘটন ঘটে। কিন্তু মালয়েশিয়া এমন কোনো শক্তিশালী দল নয় যে বাংলাদেশ তাদের হারাতে পারবে না। অন্যদিকে আবার শ্রীলঙ্কাও এতটা দুর্বল নয় যে তারা বাংলাদেশকে হারাতেই পারবে না।
আরেক গ্রুপে বাহরাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড খেলবে। তাদের শক্তিও আহামরি নয়। এটা ঠিক এশিয়ান ফুটবলে বাহরাইন এখন একটা শক্ত অবস্থানে আছে। তাদের মূল জাতীয় দল এখন অনেক শক্তিশালী। কিন্তু যে দল বঙ্গবন্ধু কাপে অংশ নেবে তারা এমন কোনো দল নয় যে তাদের হারানোই যাবে না। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর ফুটবলে উন্নতি করলেও তারা যে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে তা কোনোভাবেই বলা যাবে না। ব্যর্থতা পেতে অবস্থা এতটা নাজুক হয়েছে যে ফুটবলে বাংলাদেশ ভালো কিছু করবে তা আশাই করা যায় না। অনেকে তাই ভাবছেন গ্রুপ ম্যাচে মামুনুলরা কোনো মতে শ্রীলঙ্কাকে হারবে তারপর সেমিফাইনাল খেলেই মিশন শেষ। মামুনুল সংবাদ সম্মেলনে নিজেই বলেছেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের ফুটবল এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছে। পুরো দল এখন দারুণ আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন যে কোনো দলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে প্রস্তুত। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে বঙ্গবন্ধু কাপে টার্গেট শুধু সেমিফাইনাল হবে কেন? ছয় দলের মধ্যে বাংলাদেশ কি শিরোপা জেতার সামর্থ্য রাখে না? বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন যতই কথা বলুক না কেন, তিনি কিন্তু জানতেন বঙ্গবন্ধু কাপে আসলে কোন মানের দলগুলো আসছে। গ্রুপিং নির্ধারণ করা বা বাংলাদেশকে জেনেশুনে দুর্বল গ্রুপে ফেলা এগুলো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং এসব কথা বলে দেশকে আরও ছোট করা হচ্ছে। বাস্তবে র্যাঙ্কিং যাই থাকুক না কেন বাংলাদেশ যদি অন্য গ্রুপে থাকত তাহলেও সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা থাকত। এখন সমালোচনা এড়াতে বাংলাদেশ টার্গেট হিসেবে সেমিফাইনালকে বেছে নিয়েছে। কেননা ফাইনালের টার্গেট বলে যদি গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় তাহলে তো লজ্জায় আর মুখ দেখানো যাবে না। এই যদি হয় মানসিকতা তাহলে আর ফুটবল খেলা দরকার কি।
বঙ্গবন্ধু কাপ অনেক দিন পর হচ্ছে। মনে রাখতে হবে প্রথম আসরেই ঢাকা মোহামেডান ও আবাহনী সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা পেয়েছিল। ফুটবলে শেষ সাফল্য এসেছিল ২০০৯ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতে। এরপর থেকেই শুধু ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, চ্যালেঞ্জ কাপ কোনো কিছুতেই পাত্তা মিলছে না। ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কাপে। ফুটবলাররা নিজেই বলেছেন, যে প্রস্তুতি হয়েছে টুর্নামেন্টে ভালো খেলার জন্য যথেষ্ট। আর এই ভালো কি শুধুই সেমিফাইনাল। ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দরিদ্র দেশে এ বাজেট যথেষ্ট বলা যায়। অথচ এর জন্য চাওয়া শুধু এক জয়। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেমিতে উঠলেই যেন বাংলাদেশ সফল হয়ে গেল। এর জন্য বাফুফে বা সভাপতি কম দায়ী নন। তিনিও বার বার বলছেন শুধু ভালো খেললে চলবে না। সেমিফাইনালেও যেতে হবে। খেলোয়াড়দের যে আত্মবিশ্বাস এখানেই তো দমে যাচ্ছে। জাতীয় দলের বেশ ক'জন সাবেক ফুটবলার বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কাপে যে দল আসছে তাতে সেমিফাইনাল খেলা কোনোভাবে যথেষ্ট হতে পারে না। যে দল আসছে তাতে অন্তত ফাইনাল খেলে যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া উচিত। তা না হলে ফুটবলে আরও হা হুতাশ নেমে আসবে।