বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে আজ। সেই ১৯৯৯ সাল। এরপর আর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের দেখা মেলেনি। শুধু বঙ্গবন্ধু কাপ বললে ভুল হবে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হতে পারেনি। আজ সেই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। এবারেই প্রথম ঢাকার বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে। সিলেট স্টেডিয়ামে আজ উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মুখোমুখি হবে। তিনটি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনালের মাধ্যমে আসরের পর্দা নামবে। ফিফা স্বীকৃতি দেওয়াতে এ টুর্নামেন্টের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এবারে আয়োজনের পেছনে বাজেট ধরা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু ঢাকাতে বঙ্গবন্ধু কাপ উপলক্ষে উৎসবের ছোঁয়া লাগেনি। কিছু ব্যানার ছাড়া শহরে কোনো সাজ-সজ্জা করা হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়েছিল আগাখান গোল্ড কাপ। পাঁচ বার আয়োজনের পর এ টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের যাত্রা হয়েছিল। দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এ টুর্নামেন্ট। ১৯৮৯ সালে এ আসরে বাংলাদেশ লাল দল চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। এটিই ছিল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। ১৯৯২ সালের পর প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপের আর দেখা মেলেনি। সে বছরই ক্লাব পর্যায়ে বিটিসি কাপ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়। ব্যাপক সাড়া পড়লেও একবার হয়েই শেষ।
১৯৯৬ সালে ডিসেম্বর মাসে বাফুফে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু কাপের আয়োজন করে। কথা ছিল প্রতি বছরই এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ধারাবাহিকতা আর রক্ষা করা যায়নি। ১৯৯৯ সালে আয়োজনের পর বঙ্গবন্ধু কাপ হারাতে বসেছিল। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতা আসার পর রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজনের চেষ্টা করেনি। শুধু তাই নয় প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে এম এ সুলতানের নেতৃত্ব দেওয়া কমিটি। ২০০৮ সালে বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কাজী সালাউদ্দিন বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজনের। এমনকি কোন কোন দেশ অংশ নেবে তার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। না, প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকার পরও জাতির জনকের নামকরণে টুর্নামেন্ট না হওয়াটা ছিল বিস্ময়ের ব্যাপার। এ ব্যাপারে সালাউদ্দিনের বক্তব্য ছিল পর্যাপ্ত ফান্ড না আসাতে টুর্নামেন্ট করা যাচ্ছে না। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এ বক্তব্য যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। কারণ বঙ্গবন্ধুর নামে টুর্নামেন্ট হবে আর ফান্ড আসবে না তা অনেকে মেনে নিতে পারছিলেন না। তবে বাফুফের নির্বাহী কমিটিরই অনেকে বলেছেন সভাপতি আন্তরিক থাকলে ঠিকই বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজন করা যেত। যাক সব বিতর্ক বা অপেক্ষার অবসান ঘটবে আজ। প্রায় ১৬ বছর পর বঙ্গবন্ধু কাপের পর্দা উঠছে। তাও আবার সালাউদ্দিন বাফুফের সভাপতি থাকা অবস্থায়। ছয়টি দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আসরে অংশ নেবে। 'এ' গ্রুপে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা। 'বি' গ্রুপে বাহরাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। বাকিরা অনূর্ধ্ব-২৩ অর্থাৎ অলিম্পিক দল। অথচ প্রথমে শোনা গিয়েছিল বাহরাইন ছাড়া সবাই জাতীয় দল। টুর্নামেন্টে একাধিক কো-স্পন্সর পাওয়া গেলেও মূল স্পন্সরের দায়িত্ব পালন করছে বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল নাইন। পাঁচ বছরের জন্য তারা বাফুফের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক পট পরিবর্তন না হলে আগামী চার বছর বঙ্গবন্ধু কাপে আর বাধা আসার কথা নয়। ঢাকার বাইরে এই প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। ১৯৯২ সালে রাজশাহীতে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্ট হলেও তা বাফুফের নিজস্ব ছিল না। ১৫ কোটি টাকা বাজেট নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। কেননা বাফুফের পূর্বে ঘোষণা ছিল টুর্নামেন্ট করতে ৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
কিন্তু হুট করে তা বাড়িয়ে ১৫ কোটি টাকা করা হয়। এত টাকা কোথায় ব্যয় হবে এ নিয়ে ক্রীড়ামোদীদের প্রশ্নের শেষ নেই। ২০ ভরি স্বর্ণ দিয়ে গোল্ড কাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পদকে নকল সোনা ধরা পড়াতে কেউ কেউ আবার সংশয় প্রকাশ করছেন কাপে ২০ ভরি সোনা আছে কিনা। টুর্নামেন্টে শক্তিশালী দল না আসলেও বাংলাদেশের টার্গেট সেমিফাইনাল। বহু প্রতীক্ষার বঙ্গবন্ধু কাপের পর্দা নামছে আজ। কিন্তু দেশের যে উত্তপ্ত পরিবেশ তাতে শান্তিপূর্ণ বা শিডিউল মেনে টুর্নামেন্ট করা যাবে কিনা এ নিয়েও সংশয় রয়েছে। বাফুফে অবশ্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চ্যানেল নাইন প্রতিটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে। ফক্স চ্যানেলেও ম্যাচ দেখানোর কথা রয়েছে।