বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলছে ১৯৯৯ সাল থেকে। এরপর থেকে টানা খেলছে। এবার পঞ্চম আসর। প্রথমবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাজিমাত করে পাকিস্তানকে হারিয়ে। স্কটল্যান্ডকেও হারিয়েছিল সেবার। কিন্তু বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্স ২০০৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ। ক্যারিবীয় বিশ্বকাপে সুপার এইট খেলেছিল টাইগাররা। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন হাবিবুল বাশার। এখন বাশার নির্বাচক প্যানেলের অন্যতম সদস্য। তার স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। এই চতুষ্ঠয় এবার টাইগারদের অন্যতম ভরসা। সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক বাশারের মতে, এই চার ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সের ওপর সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করছে টাইগারদের। তবে আফগানিস্তান কিংবা স্কটল্যান্ড নয়, টাইগারদের মূল প্রতিপক্ষ নিজেরাই; মনে করেন বাশার। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে ভালো করতে আত্দবিশ্বাসী হওয়ার পাশাপাশি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া জরুরি সাবেক অধিনায়কের দৃষ্টিতে।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে সাফল্য পেতে মরিয়া টাইগাররা নির্ধারিত সূচির বেশ অনেকদিন আগে ঢাকা ছাড়েন। ব্রিসবেনে এখন দুই সপ্তাহের কোচিং করছেন মাশরাফিরা। কাল সেখানে অনুশীলন ছিল না। ঘুরেফিরে সময় কাটিয়েছেন মাশরাফি বাহিনী। ক্যাম্প চলাকালীন দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে টাইগাররা। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে গঠিত দলটিকে ব্যালেন্সড বলেন বাশার, 'অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের কথা বিবেচনা করে বিশ্বকাপের স্কোয়াড তৈরি করেছি আমরা। খেয়াল করলে দেখবেন, বোলিং বিভাগে চার জেনুইন পেসার, একজন সিমিং অলরাউন্ডার ও তিনজন বাঁ হাতি স্পিনার নেওয়া হয়েছে। যে উইকেটে যেমন বোলার প্রয়োজন হবে, তেমনই পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ব্যাটিং বিভাগেও ইনফর্ম ক্রিকেটারদের নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দলটিকে আমি ব্যালেন্সড বলব।' এই দল নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মতো বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছেন বাশার নিজেও। দুই স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা থাকায় সেরা চার হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা একটু কষ্টকর টাইগারদের। এ ছাড়া সেখানকার সিমিং কন্ডিশনে প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ড ভাবনায় ফেলে দেওয়ার মতো দল। এমন প্রতিপক্ষ থাকার পরও ভালো কিছুর প্রত্যাশা বাশারের, 'আমরা সবগুলো দেশকে হারানোর ক্ষমতা রাখি। অতীতে হারিয়েছিও। আফগানিস্তানকে নিয়ে অনেকের মনে শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু আমার মনে নেই। আমি জানি ক্রিকেটাররা যদি নিজেদের মতো খেলতে পারে, তাহলে আফগানিস্তান কেন, যে কোনো দলকে হারাবে। এ জন্য বিশ্বাস রাখতে হবে নিজেদের ওপর।'
২০১৪ সালে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলেও খুব ভালো সময় কাটেনি। টানা ১২ হারের লজ্জা এড়িয়েছে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে। আফ্রিকান প্রতিনিধিদের হোয়াইটওয়াশের পর হারানো আত্দবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন মাশরাফিরা। সেই আত্দবিশ্বাস নিয়েই টাইগাররা এখন ব্রিসবেনে। এই দলের চার ক্রিকেটার মাশরাফি, সাকিব, তামিম ও মুশফিককে এবারের বিশ্বকাপে দলের অন্যতম ভরসা মানছেন সাবেক অধিনায়ক, '২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ছিলেন তরুণ। মাশরাফি ছাড়া বাকি তিনজন প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। দারুণ খেলেছিলেন সেবার। সাত বছরের ব্যবধানে তারা এখন অনেক অভিজ্ঞ। তারা সবাই ম্যাচ উইনার। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য এদের ওপর নির্ভর করে সত্যি। কিন্তু সাফল্য পেতে পুরো দলকে পারফরম্যান্স করতে হবে। পুরো দল একত্রে পারফরম্যান্স করলে আমি বিশ্বাস করি দল অনেকদূর যাবে।' দলের ওপর আস্থা থাকলেও সাবেক অধিনায়ক মনে করেন, সবকিছু নির্ভর করছে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ওপর, 'অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে উপমহাদেশের দেশগুলোর সাফল্য পাওয়া খুবই কঠিন। সেখানকার উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কঠিন লড়াই করতে হয় দলগুলোকে। আমি মনে করি আমাদেরও কঠিন লড়াই করতে হবে। সাফল্য পাওয়ার মূল শর্ত এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে কত দ্রুত খাপখাইয়ে নিতে পারা।' বাংলাদেশ এবারই শেষ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে খেলতে হলে বাছাই পর্ব খেলতে হতে পারে আইসিসির শর্ত অনুযায়ী। আইসিসির শর্ত অনুসারে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বাকি দুই দলের জন্য দুই টেস্ট খেলুড়ে দেশসহ আইসিসির সহযোগী চার দল খেলবে বাছাই পর্ব। তাই বাংলাদেশ যদি ২০১৭ সালের আগে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটে জায়গা করে নিতে না পারে তাহলে বাছাই পর্ব খেলতে হবে এবং এটাই সে অর্থে শেষ বিশ্বকাপ।