বিচিত্র অনেক ঘটনাই ঘটেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। সৃষ্টি হয়েছে হাজারো রেকর্ড। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতার মঞ্চে বাবা-ছেলের অংশগ্রহণের মতো বিরল ইতিহাসও রয়েছে। বিশ্বকাপের গত ১০ আসরে বাবা ও ছেলের বিশ্বকাপ খেলার মতো ঘটনা ঘটেছিল মাত্র তিনবার। ডন প্রিঙ্গল-ডেরেক প্রিঙ্গল, ল্যান্স কেয়ার্নস-ক্রিস কেয়ার্নসের পর যোগ হয়েছে ক্রিস ব্রড- স্টুয়ার্ট ব্রড। এবারের বিশ্বকাপে বাবা-ছেলের আরও তিন জুটি দেখতে পাবে ক্রিকেটবিশ্ব।
ভারতের স্টুয়ার্ট বিনি, অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ এবং নিউজিল্যান্ডের টম লাথামের বিশ্বকাপ অভিষেক হতে যাচ্ছে। তাদের বাবা- রজার বিনি, জিওফ মার্শ এবং রড লাথাম বিশ্বকাপ খেলেছেন। ভারতের হয়ে রজার বিনি ১৯৮৩ এবং ১৯৮৭ বিশ্বকাপে খেলেছেন, জিওফ মার্শ '৮৭ ও '৯২-র বিশ্বকাপে খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে, আর কিউই জার্সিতে রড লাথাম খেলেছেন ১৯৯২ বিশ্বকাপে।
বাবার পর ছেলে বিশ্বকাপে খেলার বিরল ঘটনাটি প্রথম ঘটে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে। ভারতের গুজরানওয়ালার মিউনিসিপল স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ডেরেক প্রিঙ্গল ইংল্যান্ডের জার্সিতে মাঠে নামার পরই বাবা-ছেলে বিশ্বকাপ খেলার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপে পূর্ব আফ্রিকার হয়ে খেলেছিলেন ডেরেকের বাবা ডন। বাবা-ছেলে বিশ্বকাপ খেলেছেন দুই দেশের হয়েছে। ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা ছেলে ডেরেক প্রিঙ্গলের জন্ম হয়েছিল কেনিয়ায়।
১৯৯২ বিশ্বকাপে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন নিউজিল্যান্ডের তারকা ক্রিকেটার ক্রিস কেয়ার্ন। মাঝে এক আসর আগে অর্থাৎ ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে তার বাবা ল্যান্স কেয়ার্নস কিউইদের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলেছেন। তবে প্রথম বিশ্বকাপ থেকে টানা তিন আসরে (১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩) খেলেছেন ল্যান্স। ছেলে ক্রিস কেয়ার্নস খেলেছেন বিশ্বকাপের টানা চার আসরে (১৯৯২, ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০৩)। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ল্যান্স আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে। এর ঠিক চার বছর পরই ছেলের অভিষেক ঘটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ক্রিস কেয়ার্নস নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রথম খেলেন ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে। বাবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়া এবং ছেলের ক্রিকেটে আগমনের মাঝে সময়ের ব্যবধানটা মাত্র চার বছর হওয়ায় ক্রিকেট বিশ্বে ঘটনাটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
২০০৭ সালে শুরু হয় ব্রডদের যুগ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে কেনসিংটন ওভাল মাঠে নেমেই রেকর্ডবুকে নাম লেখান স্টুয়ার্ট ব্রড। বাবা ক্রিস ব্রডের পর ছেলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলেন। ম্যাচটি ছিল স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। তবে আরেকটি কারণে স্টুয়ার্ড ব্রডের বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচটি মহাগুরুত্বপূর্ণ, সেটি ছিল ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বাবা ক্রিস ব্রডের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। একই ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ডেরেক প্রিঙ্গলেরও। এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেও খেলেছেন স্টুয়ার্ড ব্রড। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ দলের চূড়ান্ত দলেও রয়েছেন তিনি।
তবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারত বিশ্বকাপ শিরোপা জিতলে সৃষ্টি হবে অনন্য একটি রেকর্ড। বাবা-ছেলে জুটি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। কেননা স্টুয়ার্ট বিনির বাবা রজার বিনি ছিলেন ৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ী ভারতের সদস্য। আর অসি তারকা মিচেল মার্শের বাবা জিওফ মার্শ ছিলেন ৮৭-র বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য। তবে জিওফ মার্শের কোচ হিসেবেও বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯৯ সালে তার কোচিংয়েই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।