বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

মানিকগঞ্জের দুটি জমিদার বাড়ী যেন ধ্বংসস্তূপ

মানিকগঞ্জের দুটি জমিদার বাড়ী যেন ধ্বংসস্তূপ

মানিকগঞ্জে দৃষ্টিনন্দিত কারুকাজ করা অনেকগুলো প্রাসাদসমৃদ্ধ দুটি জমিদারবাড়ী রয়েছে, একটি সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদারবাড়ী ৫.৮৮ একর জায়গায় অবস্থিত। আরেকটি শিবালয় উপজেলার তেওতা এলাকায় ৭.৭৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। বালিয়াটি জমিদারবাড়ীটি সংস্কারের অভাবে দৃষ্টিনন্দিত কারুকার্য খচিত দুর্লভ নিদর্শন হারাতে বসেছে। সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেওয়ায় দিনে দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় কমে যাচ্ছে, ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। সংকোচিত হচ্ছে বিনোদনের পরিধি। অন্যদিকে তেওতা জমিদার বাড়িটি ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনগুলো দীর্ঘদিন বেদখল থাকার কারণে এ বাড়িটি সংস্কার করা হয়নি। ফলে এখানে সারাক্ষণ মাদক সেবন, বিক্রি ও অসামাজিক কাজকর্ম চলে বিনাদ্বিধায়। মানিকগঞ্জে কোনো বিনোদনের জায়গা নেই এই দুই জমিদারবাড়ীকে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র করা হলে বিনোদন পিপাসুদের পিপাসা মিটবে অন্য দিকে রক্ষা পাবে প্রত্নতত্ত্ব, সরকারের আয় হবে রাজস্ব।

সূত্রে জানা যায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি এলাকায় খ্রিস্টীয় উনিশ শতকে ইমারতগুলো নির্মিত হয়েছে। বালিয়াটি প্রাসাদ চত্বরটি চারদিকে প্রাচীর ঘেরা ৫.৮৮ একর জায়গার ওপর অবস্থিত। এখানে ৭টি প্রাসাদতুল্য ভবন রয়েছে। যার মধ্যে ২০০টি কক্ষ আছে। এই প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় একটি দৃষ্টিনন্দন রংমহল রয়েছে। এই রংমহলে জমিদার পরিবারের ব্যবহৃত নিদর্শনাদী প্রদর্শিত হচ্ছে। মানিকগঞ্জে বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা না থাকায় জেলার সব শ্রেণির লোকজন বিনোদনের জন্য এই জমিদারবাড়ীতে ভিড় জমায়। ঈদ, পূজা, নববর্ষসহ বিভিন্ন জাতীয় দিনগুলোতে লোক সমাগম হয় বেশি। তাছাড়া প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে লোকজন বেড়াতে আসেন। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বালিয়াটি জমিদারবাড়ীটি ধ্বংস হতে বসেছে। অনেকগুলো সুবিশাল ভবন থাকলেও মাত্র ১টি ভবন ছাড়া সবগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী। ভবনগুলোর এমন দুরবস্থা যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অন্দরমহলে ৫টি পাকা ঘাট সমৃদ্ধ একটি পুকুর থাকলেও সুধু খননের অভাবে এটি পরিত্যক্ত রয়েছে। বালিয়াটি প্রাসাদের গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ১৯৬৮ সালে (সংশোধিত ১৯৭৬) প্রত্নসম্পদ আইনে ১৯৮৭ সালে এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে। কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। এটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি তাদের। প্রায় সবগুলো দরজা-জানালা ভাঙা, বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সাপের ভয়। ময়লা, নোংরা আবর্জনায় ভরা পরিবেশ। আগত দর্শনার্থীদের নেই কোনো বসার জায়গা, নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, আগতদের গাড়ি পার্কিং ও বসে খাবারের মতো কোনো জায়গা নেই। বালিয়াটি জমিদারবাড়ীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যক্তি নুরুল হক জানান, প্রাচীর ঘেরা অনেকগুলো ভবনের মধ্যে মাত্র একটি ভবন ছাড়া সবগুলোই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দিনে দিনে স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় রাতে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে। তিনি আরও বলেন আগতদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, সময় কাটানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে বিড়ম্বনার শিকার হন। সামনের বিশাল পুকুরটি উপজেলার কাছ থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। পুকুরটি পাওয়া গেলেই আমরা নৌকার ব্যবস্থা করে দিব। দীর্ঘদিন পরে এবার কিছু সংস্কার হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এখান থেকে সরকারের আয় হবে লাখ লাখ টাকা আর রক্ষা পাবে আমাদের দুর্লভ স্থাপনার নিদর্শন। ফলে দেশ-বিদেশের অতিথিদের আগমনে মুখরিত থাকবে পুরো এলাকা। অপর দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় তেওতা জমিদারবাড়ীটি ৭.৭৫ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। বংশানুক্রমে জমিদার জয়শংকর ও হেমশংকর দুই ভাই ১৯৪৭ সালে ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে সরকার অধিগ্রহণ করলেও সংস্কার না করায় অযত্নে অবহেলার কারণে বেশির ভাগ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি রুমের দরজা জানালা ভাঙা, ভালো দরজা-জানালাসহ দুর্লভ নিদর্শনগুলো ইতিমধ্যেই চুরি হয়ে গেছে। এই তেওতা জমিদারবাড়ীতে ৫টি বৃহৎ ভবন রয়েছে আর এই ভবনগুলোতে ৫৫টি রুম আছে। মাত্র ১টি রুমে তেওতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলছে। বাকি রুমগুলো দখলদাররা দাপটের সঙ্গে ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যে প্রাচীন দুর্লভ নিদর্শনগুলো বেহাত হয়ে যায়। এখনো কোটি কোটি টাকার অমূল্য সম্পদ রয়েছে এসব সংরক্ষণ করে পর্যটন শিল্প গড়ে তুললে অনেক টাকা রাজস্ব আয় হবে।

মো. কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

 

সর্বশেষ খবর