রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিখ্যাত যুদ্ধ সাংবাদিক

সাইফ ইমন

বিখ্যাত  যুদ্ধ  সাংবাদিক

সাংবাদিকতার ইতিহাস আসলে সাহসিকতার ইতিহাস। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সাংবাদিকদের ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেক সাংবাদিক আছেন যারা জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সংবাদ প্রচার করে থাকেন। এসব সাংবাদিককেই বলা হয় যুদ্ধ সাংবাদিক। সংবাদ সংগ্রহের জন্য যুদ্ধ সাংবাদিকরা সরাসরি চলে যান যুদ্ধক্ষেত্রে। অনেক সময়ই ঘটে প্রাণহানি। অনেক সাংবাদিক আহত হন। অসীম সাহসী সাংবাদিকরা তবুও থেমে নেই। কিছু যুদ্ধ সাংবাদিক আছেন যারা তাদের অনন্য মেধা, নিষ্ঠা, সততা ও সাহসিকতার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। এমন কয়েকজন সাংবাদিকের কথা নিয়ে  আজকের রকমারি-

 

শিফা গার্দি  (ইরান)

শিফা গার্দি নারী সাংবাদিকতায় এক অনন্য নাম। মেধাবী সাংবাদিক শিফার জম্ম ১৯৮৬ সালে ইরানের এক শরণার্থী পরিবারে। ইদবিলের সালাহউদ্দিন ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০০৬ সালে শিফা সাংবাদিকতা শুরু করেন। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় সাফল্যের সঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করেছেন সাংবাদিকতা পেশায়। শিফা কুর্দি মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন ২০১৩ সালে। এরপর চ্যানেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাংবাদিকদের অন্যতম হয়ে ওঠেন এই নারী। ভয়ানক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে টেলিভিশনে সরাসরি সংবাদ সম্প্রচারে সাহসী শিফাকে দেখা গেছে বহুবার। এমনকি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ের সংবাদ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করেছেন এই নারী সাংবাদিক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শিফা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সাধারণ মানুষের সাহায্যেও এগিয়ে আসতেন। আবার আহত পশু-পাখি উদ্ধারেও এগিয়ে আসতেন শিফা। কিছুদিন আগে ইরাকের মসুলের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে একটি খরগোশ উদ্ধার করেন তিনি। খরগোশটি সুস্থ হলে তাকে কোনো প্রাণী সংরক্ষণাগারে দিয়ে আসা হবে, এমনটাই কথা ছিল। কিন্তু তা দেখে যেতে পারলেন না আলোচিত এই নারী সাংবাদিক। ইরাকের মসুলে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে শিফা গার্দি রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন। ইরাকি কুর্দি টিভি স্টেশন রুদায় কর্মরত ৩০ বছর বয়সী শিফা তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও টেলিভিশনে সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছেন। ওই সময় তিনি পশ্চিম মসুল থেকে খবর সংগ্রহ করছিলেন। তার পেছনে দেখা যাচ্ছিল জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে ইরাকি বাহিনীর লড়াইয়ের দৃশ্য।

 

মার্গারেট ব্রু হোয়াইট (যুক্তরাষ্ট্র)

মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট সাংবাদিকতার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন   পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধের খবর সংগ্রহকারী নারী হিসেবে। ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহের জন্য এক সময় কেবল পুরুষদেরই যোগ্য মনে করা হতো। কিন্তু মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট এই ধারণা গুঁড়িয়ে দেন। তিনিই ছিলেন প্রথম বিদেশি ফটোগ্রাফার, যাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিতরকার ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কজন সাংবাদিক এ উপমহাদেশ বিভাজনের সময়টুকুতে খবর ও ছবি সংগ্রহের কাজে যুক্ত ছিলেন, হোয়াইট ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে পাক-ভারত বিভাজনের সময় তার তোলা অনেক বিখ্যাত ছবি রয়েছে।

 

 

মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পাশে ছিলেন সাইমন ড্রিং

যুদ্ধ সাংবাদিক হিসেবে খ্যাত সাইমন ড্রিং কলম আর ক্যামেরা হাতে নিজের জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে নিরীহ বাংলাদেশিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে সাইমন ড্রিংয়ের বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর। তিনি তখন নামকরা পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফের একজন সাংবাদিক। অন্যদিকে তখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানি সামরিক সরকার ২৫ মার্চ বিশ্বের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমগুলোর ৪০ জন সাংবাদিককে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়েছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগান সাইমন ড্রিং। টেলিগ্রাফের সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন তিনি। পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনের চিত্র তিনি তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর সামনে। এক সময় সাংবাদিকদের জন্য অবস্থা প্রতিকূলে চলে যায়। অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সাইমন ড্রিং দেশত্যাগ না করে লুকিয়ে থাকেন হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে। তিনি ২৭ তারিখে পাকিস্তানি বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে আসেন শহরে। ঢাকার বুকে তখন হত্যা, ধ্বংস আর লুটপাটের চিহ্ন। অথচ নিজেদের অপকর্ম লুকাতে পাকিস্তানি সামরিক সরকার চাইছিল বিশ্ব মিডিয়ায় ঢাকাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখাতে। সাইমন ড্রিং পর্যাপ্ত ছবি আর প্রত্যক্ষ ছবি সংগ্রহ করে পালিয়ে যান ব্যাংককে। আর সেখান থেকে প্রকাশ করেন ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’। বিশ্ববাসীর সামনে তিনি তুলে ধরেন নির্মম বাস্তবতাকে।

তার পাঠানো খবরেই নড়েচড়ে বসে পুরো বিশ্ব। ২৫ মার্চ কালরাতের পর ঢাকার ভয়াবহ নির্মম পরিস্থিতি প্রকাশ করেন তিনি।

 

ডেভিড স্টিফেন রোড (যুক্তরাষ্ট্র)

অনন্য নির্ভীক এক সাংবাদিকের নাম ডেভিড স্টিফেন রোড। নিউইয়র্ক টাইমসের এই সাংবাদিককে নিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যেখানেই যুদ্ধ সেখানেই তিনি। মৃত্যুকে থোড়াই পরোয়া করেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ায় সার্ব-বসনিয়া যুদ্ধ প্রথম কভার করেন তিনি। ডেভিডই প্রথম মুসলিম জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন করার সার্ব ষড়যন্ত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলকান যুদ্ধের সময়কার সার্বিয়ান ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরেন তার লেখনীতে। ইরাক যুদ্ধেও কাজ করেন তিনি। আবু গারিব কারাগার ও ইরাকজুড়ে মার্কিন বাহিনীর নির্যাতন তুলে আনেন ডেভিড। ২০০৮ সালে তাকে তালেবানরা অপহরণ করে। সাত মাস পর তিনি মুক্তি পান।

 

 

রবার্ট ফিস্ক  (ইংল্যান্ড)

এই ব্রিটিশ সাংবাদিক বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুদ্ধাভিযানের সংবাদ সংগ্রহ এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে তা পরিবেশনের জন্য। ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতা শুরু করেন ফিস্ক। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয় নিয়ে সংবাদ সরবরাহ করে খ্যাতি লাভ করেন। ২০০৮ সাল অবধি তিনি ৩২ বছরে কমপক্ষে ১১টি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেন। ইসরায়েলি আগ্রাসন, ইরানের বিপ্লব, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন, উপসাগরীয় যুদ্ধ। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনবার ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে সক্ষম হন। তিনি পুলিৎজারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন।

 

 

মুক্তিযুদ্ধে ক্যামেরাযোদ্ধা কিশোর পারেখ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে কজন সফল ক্যামেরাযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের চিত্র সেলুলয়েডবন্দী করেছিলেন তাদের একজন কিশোর পারেখ। কোনো সংবাদ সংস্থার নির্ধারিত অ্যাসাইনমেন্ট ছাড়াই তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবি তুলেছিলেন। মাত্র আট দিনে তার তোলা ৬৭টি ছবি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে আছে। এই সাহসী সাংবাদিকের জম্ম ১৯৩০ সালে ভারতে। ১৯ বছর বয়সে প্রথম হাতে ক্যামেরা তুলে নেন। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র ও স্থিরচিত্রের ওপর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি হিন্দুস্তান টাইমসে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর তার তোলা ছবিগুলো তার জীবনের সেরা ফটোগ্রাফির একটি মূল অংশ হিসেবে গণ্য। ঢাকায় অবস্থানকালীন একজন সিভিলিয়ান হয়ে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি তোলা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল। তাই তিনি পাকিস্তান আর্মির পোশাক জোগাড় করে ঐতিহাসিক কাজগুলো সাহসিকতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছিলেন। ছবি তুলতে গিয়ে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছিলেন। এই যুদ্ধ সাংবাদিক ফটোগ্রাফারের ক্যারিয়ারের শুরুতে লাইফ ম্যাগাজিন এবং ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফটোগ্রাফার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি কনটেস্টে সাতটি ক্যাটাগরির মধ্যে ছয়টি পুরস্কার জিতে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করেন।

 

যার ক্যামেরায় মুক্তিযুদ্ধ দেখি

যুদ্ধ সাংবাদিকদের কলমযুদ্ধের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব নিয়ে লড়ে যান ক্যামেরাযোদ্ধারাও। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সফল ক্যামেরাযোদ্ধা রশীদ তালুকদার। তার ক্যামেরায় বন্দী হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বহু সাক্ষ্য-প্রমাণ। তার ক্যামেরায় দেখা মুক্তিযুদ্ধই আমরা ছবিতে দেখি। এ দেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই এই ফটো সাংবাদিকের নাম উঠে আসে সবার আগে। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছেন শুধু দেশের জন্য। এই ক্যামেরাযোদ্ধা ১৯৬৯ সাল থেকে শুরু করে আজীবন ক্যামেরায় দেশ ও জাতির ইতিহাসকে ধারণ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অনেক চিত্রই তার হাতে তোলা। ১৯৩৯ সালের ২৪ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায় জম্ম রশীদ তালুকদারের। রাজশাহীর স্টার স্টুডিওতে মরহুম মোতাহার হোসেনের কাছে হাতেখড়ি হয়। ১৯৬১ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৩ বছর দৈনিক সংবাদে কাজ করেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা ৩২ বছর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সিনিয়র ফটো সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ফটো-জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। আলোচিত এই আলোকচিত্রীর ছবি নামে অথবা বেনামে সরকারি, বেসরকারি নানা প্রকাশনা, পোস্টার, ক্যালেন্ডার এবং অসংখ্য বইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে বিখ্যাত এই আলোকচিত্রী নিজস্ব একক অ্যালবাম প্রকাশ করেননি।

 

এলিজা প্যারিস লভজয় (যুক্তরাষ্ট্র)

এলিজা প্যারিস লভজয় ছিলেন আধুনিক সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম অপঘাতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি। একজন যুদ্ধ-সাংবাদিক হিসেবে তার বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিজেই যুদ্ধ করেন সমাজের প্রচলিত দাসপ্রথার বিরুদ্ধে। সোচ্চার ছিলেন তার লেখনীতে। ১৮২৬ সালে ওয়াটারভিল কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন লভজয়। দাসপ্রথার বিরুদ্ধে তার সোচ্চার মতামত তাকে একটি জ্যাকসন বিরোধী সংবাদপত্রের সম্পাদক বানিয়ে দেয়। ১৮০২ সালের ৯ নভেম্বর মাইনেতে জম্ম গ্রহণকারী লভজয় বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৪ বছর। ১৮৩৭ সালের ৭ নভেম্বর আততায়ীরা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

 

 

উইলফ্রেড ব্রুচেট  (অস্ট্রেলিয়া)

সর্বকালের সেরা সাংবাদিকের তালিকায় যুদ্ধ-সাংবাদিক উইলফ্রেড ব্রুচেটের অবস্থান চতুর্থ। মজার ব্যাপার হলো, দুনিয়া কাঁপানো এই সাংবাদিক তার প্রথম জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন। এমনকি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ও সেলসম্যানের কাজ করেছেন। ‘ডেইলি এক্সপ্রেস’ ছিল তার জীবনের প্রথম পত্রিকা, যেটির মাধ্যমে তিনি তার সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমার ভয়াবহ ক্ষতির চিত্র কভার করেন ব্রুচেট। বিশ্বজুড়ে তার এই কাজ দারুণ সাড়া ফেলে। ব্রুচেটের জম্ম ১৯১১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ায়। ১৯৮৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এই মহান সাংবাদিক দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।

 

 

পিটার অরনেট (নিউজিল্যান্ড)

যুদ্ধ সাংবাদিক পিটার অরনেট যুদ্ধক্ষেত্রের অসাধারণ সব ছবি তোলার জন্য সারা বিশ্বেই বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তিনি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় সাংবাদিক। ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন তিনি মৃত্যুভয়কে পেছনে ঠেলে অসাধারণ সব ছবি তুলে আনেন। কাজের ক্ষেত্রে তার অসীম সাহসিকতা সবাইকে তাক লাগিয়ে  দেয়। প্রথম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ও তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পিটার অরনেটের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাঠানো অসাধারণ ছবিগুলো। ছবিগুলোকে সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধ কভার করে তিনি ১৯৬৬ সালে পুলিৎজার লাভ করেন।

 

৬০ বছর সাংবাদিকতা পেশায় মার্থা গেলহর্ন

মার্থা গেলহর্ন বিশ্বের প্রথম যুদ্ধ সাংবাদিকতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।  নারীরাও যে যুদ্ধ সাংবাদিকতায় পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, মার্থা গেলহর্নই প্রথম এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দীর্ঘ ৬০ বছরের সাংবাদিকতা পেশায় কর্মরত ছিলেন এই প্রথিতযশা সাংবাদিক। সর্বপ্রথম যুদ্ধ সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৩৬ সালে ঘটে যাওয়া স্প্যানিশ সিভিল ওয়ার কভার করার মধ্য দিয়ে। তারপর কভার করেছেন একে একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতো দুনিয়া কাঁপানো যুদ্ধগুলোর তরতাজা সব ঘটনা। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া যুদ্ধগুলোর ওপরও সংবাদ পরিবেশন করেন যেমন ফিনল্যান্ড, হংকং, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড ইত্যাদি। যুদ্ধ সময়ের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন মার্থা।

১৯৯০ সালে সাংবাদিকতা থেকে অবসর নিয়ে পুরোদমে লেখক বনে যান মার্থা। ব্রাজিলে চলে আসেন মার্থা। সেখানকার পথশিশুদের সঙ্গে মিশে যান তিনি। এরপর এই পথশিশুদের নিয়ে বই লিখেন। মার্থা জম্ম গ্রহণ করেন ১৯০৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীর পাড় ধরে গড়ে ওঠা শহর সেন্ট লুইসে তার বড় হওয়া। কিন্তু অসীম সাহসী এ সাংবাদিক শেষ বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সারা জীবন যুদ্ধের স্টোরি কভার করা অকুতোভয় এই নারী ক্যান্সারের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।

 

মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে যুদ্ধের সংবাদ তুলে আনেন ক্লেয়ার হলিং ওয়ার্থ

ক্লেয়ার হলিং ওয়ার্থ প্রখ্যাত ব্রিটিশ নারী যুদ্ধ সাংবাদিক। ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডের লেস্টারে জম্ম নেওয়া কীর্তিমান সাংবাদিক হলিং ওয়ার্থই প্রথম জার্মান বাহিনীকে পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে দেখেন এবং ১৯৩৯ সালের আগস্ট মাসে জার্মানির পোল্যান্ড অভিযান সম্পর্কে সংবাদ প্রচার করেন। এ সময় তিনি পোল্যান্ড থেকে জার্মানি যাচ্ছিলেন। তিনি ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে ভ্রমণ করতেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য। সংবাদদাতা হওয়ার আগে হলিং ওয়ার্থ হাজার হাজার মানুষকে হিটলারের সেনাবাহিনী থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেন ব্রিটিশ ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়ে। শেষ জীবনে এই মহীয়সী নারী হংকংয়ে বসবাস করতেন। হংকংয়ের বৈদেশিক প্রতিনিধি ক্লাবের সদস্যও ছিলেন ক্লেয়ার হলিং ওয়ার্থ। ১০৫তম জম্মদিন পালন করেছিলেন এই ক্লাবে। হংকংয়ের বৈদেশিক প্রতিনিধি ক্লাবের সভাপতি তারা  জোসেফ এই সাংবাদিক সম্পর্কে বলেন, হলিং ওয়ার্থ এক অসাধারণ প্রেরণা এবং সম্পদের চেয়েও দামি সদস্য। সাংবাদিক হলিং ওয়ার্থ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ১৯৭০ সালে বেইজিং থেকে কাজ শেষ করে জীবনের শেষ চার দশক তিনি হংকংয়ে বসবাস শুরু করেন। যুদ্ধ সাংবাদিক যিনি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার খবর। খ্যাতিমান এই সাংবাদিক হংকংয়ে পরলোক গমন করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর