রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে করোনার দুই হাসপাতাল বন্ধ, কমেছে শয্যা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে করোনার দুই হাসপাতাল বন্ধ, কমেছে শয্যা

রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। দেশেও বাড়ছে রোগী। করোনা চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে মিশন হাসপাতাল ও আইডি হাসপাতালকে বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছিল। তার পরেও প্রথম ধাক্কায় নানা অসংগতি ফুটে ওঠে। অক্সিজেন, আইসিইউ সংকট ছিল চরমে।

প্রথম ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা থাকলেও সেই প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল সেপ্টেম্বরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগের যেসব ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হতো, সেগুলো স্বাভাবিক ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। ফলে নতুন করে আক্রান্ত রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না।

যদিও প্রস্তুতি আছে দাবি করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, প্রথমবারের ধাক্কা থেকে তারা শিক্ষা নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতন করেছেন। রোগী বাড়লেও এখনো নতুন করে মিশন ও আইডি হাসপাতালকে আবারও করোনা হাসপাতালে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রয়োজন পড়লে করা হবে।

তিনি জানান, আগের চেয়ে রোগী কমেছে। তাই করোনার সব কার্যক্রম রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য হাসপাতালে নতুন করে ২৮টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানালক অক্সিজেন, ১৫টি কনটেক্টর অক্সিজেনসহ নতুন করে বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে নির্ধারিত সব ওয়ার্ড নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডের মাঝে ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান বেড সংখ্যা আছে মোট ১৮টি। ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ৪৮টি। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ৩০টি, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ১০টি, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ২৯টি, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ৩২টি, কেবিনে ২২টি। আইসিইউতে বেড আছে ২০টি। এর মধ্যে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১৫টি। তবে এখন সেগুলোতে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে আপাতত করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রস্তুতি আছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। করোনা আক্রান্তদের জন্য সেগুলো সংরক্ষিত করলে স্বাভাবিক চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটবে।  তবে মিশন হাসপাতালের ৪০টি ও আইডি হাসপাতালের ২৩টি শয্যা এবার কমে গেছে।

তবে গত এক মাসে রোগী বাড়তে থাকায় এখনই চিকিৎসায় টান ধরেছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে চিকিৎসা দিতে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী। তিনি বলেন, রামেক হাসপাতালের এখনই যে অবস্থা, তাতে চিকিৎসায় টান ধরেছে। সেই সঙ্গে সরঞ্জামের ঘাটতি ভোগাতে পারে এবার। সংকটগুলো দ্রুত মিটিয়ে প্রস্তুতি রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি।

রাজশাহীতে চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত থাকলেও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুরো বিভাগে আইসিইউ বেড আছে মাত্র ২৬টি। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি ও বেসরকারি সিডিএম হাসপাতালে ছয়টি। চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন যে হারে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাতে মাত্র ২৬টি আইসিইউ বেড নিয়ে মোকাবিলা করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। দ্রুত আইসিইউ বেড বাড়ানোর দাবি জানাতে হবে মন্ত্রণালয়ে। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য জানান, যে পরিমাণ রিসোর্স আছে, তা নিয়েই করোনা মোকাবিলায় তারা প্রস্তুতি রেখেছেন। তবে মাত্র ২৬টি আইসিইউ যথেষ্ট নয়। এ নিয়ে সব সময় আলোচনা হচ্ছে। কীভাবে সক্ষমতা বাড়ানো যায়, সেজন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, করোনার শুরুতে চিকিৎসায় নানা অসঙ্গতি দেখা গেছে। এখন আবার নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা এখনো নেয়নি। আগের দুটি বিশেষায়িত হাসপাতালও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখানকার রোগীদের জন্য চিকিৎসা পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর