রবিবার, ৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা ধনী পরিবার

তানভীর আহমেদ

বিশ্বসেরা ধনী পরিবার

ফোর্বস সাময়িকীর কল্যাণে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি এবং তাঁদের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে কমবেশি সবারই একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। ধনকুবেরদের নিয়ে মানুষের আগ্রহ অকৃত্রিম এবং আদি। তাই আমরা আজকে জানাব পৃথিবীর সেরা ধনী পরিবারগুলো সম্পর্কে। কারণ অনেকে ব্যক্তিগত সফলতা ছাড়িয়ে গোটা পরিবারকে নিয়েও সফল। এসব পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সম্মিলিত জিডিপির সমান বলে এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে।  বিশ্বের সেরা ধনী পরিবারের কথা নিয়ে আজকের রকমারি...

 

আল সৌদ রাজপরিবার  [সৌদি আরব]

সম্পদের পরিমাণ : ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার

বাদশাহ সৌদ রাজপরিবার আজ পৃথিবীর অনতম সেরা ধনী পরিবারগুলোর একটি। এখনো রাজতন্ত্র মেনে চলা সৌদির এ পরিবার যুগ যুগ ধরে শাসন করে আসছে। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে সৌদি আরব শাসন করা এ রাজপরিবারের শাসকরা পরিচিত আল সৌদ নামে। পরিবারটির বর্তমান সম্পদের বাজারমূল্য ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এদের মূল আয়ের উৎস তেলের খনি। সারা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেল বিক্রি করেই তাদের বেশির ভাগ আয় হয়। সৌদির তেলের ওপর পুরো বিশ্বের নির্ভরতা তাদের দিন দিন ধনী করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক কোম্পানি সৌদি আরামকোসহ অনেক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে সৌদি রাজপরিবারের বিনিয়োগ আছে।  এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই পরিবারটি এ সম্পদ অর্জন করেছে।

 

ওয়াল্টন পরিবার  [আমেরিকা]

সম্পদের পরিমাণ : ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ওয়াল্টন পরিবার। মার্কিন ব্যবসায়ী স্যাম ওয়াল্টনের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ালমার্ট। তাদের সম্পদের পরিমাণ ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুপার চেইন শপ ওয়ালমার্টই পরিবারটির আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। তাদের পরিবারের ছয় সদস্য পুরো ব্যবসার ৫৪ শতাংশ শেয়ার নিজেদের দখলে রেখেছেন। পোশাক ব্যবসায় ওয়াল্টন পরিবার একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসায় কোণঠাসা হলেও ২০১৫ সালে ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার ব্যবসা করে নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দিয়েছে। দিন দিন ওয়ালমার্টের সুনামের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সম্পদের পরিমাণ বাড়ছেই। বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। 

 

বার্নার্ড আরনল্ট পরিবার  [ফ্রান্স]

সম্পদের পরিমাণ : ১৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ফ্রান্সের বার্নার্ড আরনল্ট ও তার পরিবারের ব্যবসার পরিসর যে কাউকে চমকে দেবে। বিশ্বজুড়ে অন্তত ৭০টি ব্র্যান্ডের মোড়কে তারা ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ডম প্যারিগনন, বুলগেরি, লউস ভোটন, ফেন্ডি, সেফোরা। এ ছাড়াও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের ৩ হাজার ৭০০ রিটেইল স্টোর। বিলাসবহুল পণ্য উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী হিসেবেও তারা সমাদৃত। এ পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের সেরা বিলাসপণ্য উৎপাদনকারী এলভিএমএইচ কোম্পানিটি তাদের মালিকানাধীন। ধনকুবের পরিবারটি ব্র্যান্ডপ্রেমিক বা ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সবসময়ই।

 

কারগিল-ম্যাকমিলান পরিবার  [আমেরিকা]

সম্পদের পরিমাণ : ৩৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিলিওনিয়ার রয়েছে এ পরিবারে। মোট ১৪ জন বিলিওনিয়ারের পরিবার কারগিল-ম্যাকমিলান পরিবার। কারগিল ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার তারা। উইলিয়াম ওয়ালেস কারগিল এটি প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানিটি খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। আর এর ৯০ শতাংশের মালিক এ পরিবার। পরিবারের আয়ের প্রধান খাতই হচ্ছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসা। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৮৬৫ সাল থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যুক্ত এ পরিবারটি কৃষি সম্প্রসারণ ব্যবসায় সফল।

 

মার্স পরিবার  [আমেরিকা]

সম্পদের পরিমাণ : ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

চকোলেট খেতে কে না পছন্দ করে। সারা বিশ্বেই চকোলেটের জনপ্রিয়তা। আর চকোলেট উৎপাদন ও বিপণন করেই বিশ্বের অন্যতম ধনী পরিবারের তালিকায় উঠে এসেছে মার্স পরিবার। এ পরিবারের সম্পদের মূল উৎস ক্যান্ডি ও চকোলেট। ফ্রাঙ্কলিন মার্স-এর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় মার্স পরিবারের ব্যবসা। মার্স পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু মানুষের খাবারই নয় বরং ঘরে পোষা প্রাণীর খাবারের বিখ্যাত ব্র্যান্ড পেডিগ্রিও মার্স পরিবারের মালিকানাধীন। ফরেস্ট জুনিয়র, জ্যাকুলিন ও জন মার্স পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

 

কার্লোস স্লিম হেলু [মেক্সিকো]

সম্পদের পরিমাণ : ৫৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইনস, ব্যাংক, আবাসন, হোটেল ব্যবসায় বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মেক্সিকোর কার্লোস স্লিম। খনি ব্যবসায়ও এখন প্রসিদ্ধ তারা। এ ছাড়া ১৯টি দেশে ৪০০ মিলিয়ন মানুষকে মোবাইল সেবা প্রদান করছে তারা। মেক্সিকো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে মোবাইল ব্যবসায় তিনি সম্রাট বনে গেছেন। তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে স্পেন ও তার পাশের দেশগুলোতে। সেখানে তেলের ব্যবসায় আধিপত্য ধরে রেখেছেন। তাই টাকার পাহাড় নিয়ে এ পরিবার এগিয়ে রয়েছে। হেলু ও তার পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

কচ ফ্যামিলি  [আমেরিকা]

সম্পদের পরিমাণ : ৬৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ফ্রেড্রিক কোচের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পায় অন্যতম ধনী কচ পরিবার। শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী হিসেবে এ পরিবারের প্রভাব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৩ সালেই কচ পরিবার ১১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেভিনিউ প্রদান করে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাদের সম্পদ ও প্রতিপত্তি প্রমাণে এ সংখ্যাতত্ত্বটি যথেষ্ট। পরিবারটির মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কচ পরিবারের আয়ের উৎসের মধ্যে তেল, রিফাইনারি, উৎপাদন অন্যতম। বর্তমানে চার্লস ও ডেভিড কচ ভাতৃদ্বয় তাদের পরিবারের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিত্ব করছে। কচ ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি এ পরিবারের ‘কচ ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দিয়ে থাকে।

 

লিলিয়ান বেটনকোর্ট পরিবার  [ফ্রান্স]

সম্পদের পরিমাণ : ৪৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

ইউরোপের সবচেয়ে ধনী নারী ছিলেন লিলিয়ান বেটনকোর্ট। ২০১৭ সালে লিলিয়ান মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তাঁর মেয়ে এবং পৌত্র ল’রিয়ালের ৩৩ শতাংশ শেয়ার দেখাশোনা করছেন। তাদের ল’রিয়াল কোম্পানির অধীনেই এনওয়াইএক্স, ম্যাবিলিন, ল্যানকম, গার্নিয়ার প্রসাধনী সামগ্রীর ব্র্যান্ডগুলো পরিচালিত হয়। প্রসাধনী ব্যবসায় তার রাজকীয় অবস্থান বিশ্বের যে কোনো প্রসাধনী ব্যবসায়ীকে চমকে দিতে বাধ্য। লিলিয়ান ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৪৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ল’রিয়েলের মালিক এ পরিবারটির মোট স্কোর ৩৯। তারা ধনী পরিবারের তালিকায় রয়েছে ৭ নম্বরে। ১৯০৭ সালে লিলিয়ানের বাবা স্কোইলারের হাতে ল’রিয়েলের গোড়াপত্তন ঘটে।

 

কক্স পরিবার  [আমেরিকা]

সম্পদের পরিমাণ : ৩৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

৩৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ সম্পদের অধিকারী যুক্তরাষ্ট্রের কক্স পরিবারও রয়েছে বিশ্বসেরা ধনী পরিবারের তালিকায়। তাদের রয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবসা। এককথায় তারা মিডিয়া মুঘল। পরিবারটির আয়ের মূল উৎসও এ মিডিয়া। তাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে অটোমোবাইল, কেবল টিভি এবং সংবাদপত্র প্রকাশনা। কক্স পরিবারের মালিকানাধীন কক্স মিডিয়া গ্রুপ ও কক্স কমিউনিকেশন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ গণমাধ্যম গোষ্ঠী। আর সব প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয় কক্স এন্টারপ্রাইজের অধীনে। জেমস মিডলটন কক্স এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৯৮ সালে তিনি একটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠান কিনে নিয়ে সেটির নাম পরিবর্তন করে মিডিয়া ব্যবসা শুরু করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর