অং সান সুচি, মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা। রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার পক্রিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) শুনানিতে একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সক্ষমতা নিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি।
এক সময় বিশ্ব দেখতো একজন হিরোইন বা বীরাঙ্গনা হিসেবে, যিনি ১৯৯১ সালে সামরিকজান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। বিশ্ব সেই বিষয়টিকে স্মরণে নিয়ে বিস্মিত যে, কেন তিনি এখন নিজের সেই প্রেস্টিজ এবং ক্যারিশমা জেনারেলদের পেছনে খরচ করছেন।
এটা করার দরকার ছিল না তার। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি যখন ঘোষণা করলেন যে, তিনি গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ব্যক্তিগতভাবে এ সপ্তাহে উপস্থিত হয়ে দেশের পক্ষে কথা বলবেন, তখন তার এই কথাটি ছিল ভীষণ মাত্রার বেদনার।
জাতিসংঘ তার রিপোর্টে অভিযোগ করেছে, ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
এর ফলে বাধ্য হয়ে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের এই রিপোর্ট সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছে মিয়ানমার।
আইসিজেতে রাষ্ট্রকে অবশ্যই একজন এজেন্টকে মনোনয়ন দিতে হয় মামলা লড়ার জন্য। তবে এই ভূমিকা সাধারণত পালন করে থাকেন এটর্নি জেনারেল অথবা আইনমন্ত্রীরা।
৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন ওআইসি’র পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করেছে আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া।
এটা সত্য যে, এই গণহত্যার অভিযোগ সাদামাটাভাবে এড়িয়ে যেতে পারে না মিয়ানমার। জাতিসংঘের একটি সদস্য দেশ মিয়ানমার। আবার জাতিসংঘেরই সর্বোচ্চ আদালত আইসিজে। কৌশলগতভাবে স্টেট কাউন্সেলর এবং মিয়ানমারের প্রকৃত নেত্রী
এর কারণ হয়তো নিহিত আছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। আগামী নভেম্বরে সেখানে জাতীয় নির্বাচন। সেইদিকে দৃষ্টি দিয়েছেন অং সান সুচি। তিনি হয়তো হিসাব কষে দেখেছেন যে, আইসিজে’র মামলা তাকে রাজনৈতিক সুবিধা দেবে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইতিহাসবেত্তা মেরি ক্যালাহান মনে করেন, গাম্বিয়ার মামলাটিকে সুচি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন। এর কারণ, এটা করে তিনি বিরোধীদের কাছ থেকে জাতিকে রক্ষাকবচ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন। এই বিরোধী পক্ষে আছে সেনাবাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (এইএসডিপি)।
বিডি প্রতিদিন/কালাম