শেষ মূহুর্তে এসে পুরো সিলেট নগরীই হয়ে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট। বৈধ-অবৈধের কোনো হিসেব নেই, যে যেখানে এক টুকরো খালি জায়গা পাচ্ছেন সেখানেই বসিয়ে দিচ্ছেন হাট। এমতাবস্থায় হাল ছেড়ে দিয়েছে প্রশাসনও। বৈধ হাট ছাড়াও পাড়ার গলি, বাসার উঠোন, স্কুল-কলেজের মাঠ, ব্যস্ততম সড়ক সবই হয়ে উঠেছে পশু কেনাবেচার স্থান। এবার প্রতিটি হাটে বিপুল পরিমাণ গরু উঠলেও দাম ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। ক্রেতারাও আছেন দম ধরে। ঈদের আগের রাতে (রবিবার রাতে) গরুর দাম কমবে এমন আশায় হাটে শুধু ঘুরাঘুরি করে সময় পার করছেন তারা।
শনিবার সিলেট নগরীর কাজিরবাজার, টিলাগড়, চৌকিদেখির বৈধ হাট ঘুরে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা নিয়ে এসেছেন প্রচুর পরিমাণে গরু। হাটগুলোতে এখনো নামছে ট্রাকে ট্রাকে গরু। হাটের নির্ধারিত জায়গায় ঠাঁই দিতে না পেরে পাশ্ববর্তী রাস্তার দুই পাশেও সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে গরু। চৌকিদেখি আনোয়ারা মতিন স্কুল মাঠের হাটের গরুর বাজার বিস্তৃত হয়েছে বিমানবন্দর সড়কের উভয় পাশ পর্যন্ত। টিভি গেইট এলাকা থেকে বালুচর পয়েন্ট, বালুচর থেকে টিলাগড় এমসি কলেজের পূর্ব গেইট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে গড়ে তোলা হয়েছে কুরবানীর পশুর হাট। এই এলাকার মধ্যে একমাত্র বৈধ পশুর হাট হচ্ছে টিলাগড় পয়েন্টের হাটটি। এছাড়া নগরীর সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, আখালিয়া, রিকাবীবাজার, হুমায়ূন রশীদ চত্বর, ঝালোপাড়া, শহরতলীর খাদিম বিআইডিসি, শাহপরাণ ও তেমুখীসহ অন্তত ৫০টি জায়গায় বসানো হয়েছে অবৈধ পশুর হাট। কোরবানীর পশুর হাট নিয়ে প্রশাসনের সমন্বয় সভায় এবার রাস্তাঘাটে বা অবৈধভাবে কোথাও পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি। অবৈধ হাটগুলোর বিরুদ্ধে কোথাও কোনো ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের ট্রাক জোর করে অবৈধ হাটগুলোতে ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে জোর করে গরু বোঝাই ট্রাক ছিনিয়ে নেওয়া হলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, শনিবার প্রতিটি হাটে প্রচুর পরিমাণ গরু দেখা গেলেও দাম ছাড়ছেন না ব্যবসায়ীরা। ৬০-৭০ হাজার টাকার নিচে মিলছে না দেশি ছোট জাতের গরু। আর মাঝারি আকারের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে লাখ টাকা। লাখ টাকার উপরের গরুরও কমতি নেই বাজারে। ব্যবসায়ীরা দাম না ছাড়ায় গরু কিনছেন না ক্রেতারাও। গত বছর ঈদের আগের রাতে গরুর দাম একেবারে নেমে যাওয়ায় এবারও একই হবে বলে মনে করছেন ক্রেতারা। তাই ঈদের আগের রাতের অপেক্ষায় আছেন তারা। হাটে হাটে ঘুরে তারা শুধু দাম যাচাই করছেন।
টিলাগড় পয়েন্টের হাটে আসা লামাপাড়ার ক্রেতা ইমরান আহমদ জানান, দেড় লাখ টাকার মধ্যে তিনি দুইটি গরু কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু গত বছর যে গরু ৭০-৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সে গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে লাখ টাকার উপরে। তার ধারণা সিলেটের হাটগুলোতে এবার যে পরিমাণ গরু উঠেছে, ঈদের আগের রাতে ব্যবসায়ীদের পানির দামে বিক্রি করতে হবে। তাই তিনি ঈদের আগের রাতের অপেক্ষায় আছেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম