রোহিঙ্গা ইস্যুতে আয়োজিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে রেজুলেশন নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। সদস্যদেশগুলোর ব্যাপক আগ্রহের ফলে সিপিএর সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করা হতে পারে। নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিপিএ চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিনের চৌধুরী সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়া ইংল্যান্ড ও মালয়শিয়া সিপিএ ডেলিগেটদের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরির্দশনের উদ্যোগ নেওয়ারও প্রস্তাব করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে এ বিষয়ে পেশ করা বাংলাদেশের প্রস্তাবের প্রতি সিপিএভুক্ত দেশগুলোর সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান সিপিএ মিডিয়া কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এমপি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, পঙ্কজ দেবনাথ প্রমুখ।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, পাকিস্তান, মালয়শিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্যামেরুন, উগান্ডা, মালেসহ ১৮টি দেশ এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। সবাই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করণে এবং এ বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য সিপিএর জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে রেজুলেশন গ্রহণের প্রস্তাব করেন। আলোচনার সময় অনেকেই বিষয়টি গণহত্যা, জেনোসাইড ও ইথনিক্যাল ক্লিনজিং হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সবাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক অবস্থান ও দেশবাসীর উদারতার প্রতি সমর্থন করে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুটি জানার বিষয়ে সিপিএ ডেলিগেটদের আগ্রহ ছিল প্রবল।
এ বিষয়ে রেজুলেশন নেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করছে কে? জানতে চাইলে কাজী নাবিল বলেন, এটা ছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং সেশন, সিপিএর সেশন নয়। এখানে যারা প্রস্তাব আনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তারাই প্রস্তাব আনবেন। আগামী পরশু (আগামীকাল) সিপিএর সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে নির্বাহী কমিটিতে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিপিএ চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিনের চৌধুরী সিদ্ধান্ত নিবেন। সিপিএতে বাংলাদেশ কোন প্রস্তাব আনছে না। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পেশ করা বাংলাদেশের প্রস্তাবের প্রতি সিপিএভুক্ত দেশগুলোর সরকারের প্রতি সমর্থন দেওয়ার আহবান জানানো হয়। দেশে ফিরে গিয়ে এ বিষয়ে নিজ নিজ জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নিজ নিজ সরকারকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিশেষ করে কো-স্পন্সর হওয়ার জন্য সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানানো হয়।
এর আগে সিপিএ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ডেলিগেট ও অবজারভারদের উদ্দেশ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন পরারাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেখানে তিনি জাতিসংঘের সাবেক মহসচিব কফি আনানের সুপারিশের উল্লেখ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে নিজ সসম্মানে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদর সামাজিক রাজনৈতিক সমানাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশে আশ্রিতদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে সমাধানও মিয়ানমারকে করতে হবে। এর আগে তথ্য উপাত্ত দিয়ে তিনি মিয়ানমারের নির্যাতিত মুসলমান রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে ধরেন। ১৮৪০ সালের জরিপেও সেখানে ৫৭ শতাংশ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। মিয়ানমার সংসদেও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। মিয়ানমারের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধান উ নু বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। অথচ আজ রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করার জন্য যা যা করার দরকার মিয়ানমার সরকার তাই করছে।
এদিকে, বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া রবিবার সিপিএর এশিয়া গ্রুপের রিজিওনাল বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব