ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোর বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেকশন তথা বাংলাদেশের লাইফ লাইন। এ করিডোরটি সার্ক, বিমসটেক, সাসেক ও অন্যান্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক রুট এবং ট্রান্স-এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্কেরও একটি অন্যতম অংশ। এ করিডোর দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো চট্টগ্রাম পোর্টের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন সুবিধা প্রদান করতে পারে। তবে প্রকৃতপক্ষে বর্তমান সরকারের সময়ে রেলের নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সেই সুফলগুলো বাস্তবে দেখছেন বলে জানান রেল সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আর্ন্তজাতিক মানের দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলওয়ে সেতু নির্মাণ ও ঢাকা-আখাউড়া ডাবললাইনে উন্নতির মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলের ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনসহ ১২০টি বিভিন্ন ট্রেনে ১০ মিনিট সময় কমে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে নির্মিত উক্ত দুটি সেতু নির্মাণের কারণে যাত্রী সেবাসহ নানাবিধ সুফলও রয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা-আখাউড়া সেকশনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ডাবললাইনে উন্নতি, ট্রেন পরিচালনায় সুবিধাবৃদ্ধি, সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচল, ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার উন্নয়ন, যাত্রী সাধারণের চলাচলে নির্বিঘ্ন আরামদায়ক, রেলের আয় বৃদ্ধি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে বলেও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেত
আগামীকাল ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতু দুটি উদ্বোধন করবেন। আশুগঞ্জ মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত এই দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এ নিয়ে ট্রেন ভ্রমনকারীদের সময় কমানোর পাশাপাশি সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে আরো একধাপ। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা সময়ও অনেকাংশে কমেছে বলে রেলের টাইম টেবিল বই সূত্রে জানা গেছে।
রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বিধায় দেশের দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেল সেতু নির্মিত হচ্ছে। আগামীকাল ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফান্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে এ সেতু দুটির উদ্বোধনের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল ভ্রমণ আরামদায়ক ও সহজ-সাশ্রয়ী হবে এবং পণ্য পরিবহন বাচঁবে সময়। এ পথে ট্রেন চলাচলে সময় অনেক কমে আসবে। ফলে রেলপথে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে জানান তিনি।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই বলেন, দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতু এবং দ্বিতীয় তিতাস রেল সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডবল লাইনে উন্নীত হবে। গত শুক্রবার এ সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করেছে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সেতু দুটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার স্টেশন পর্যন্ত ডাবল রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে। এই ডাবল লাইন চালুর ফলে এই অংশে এখন প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনসহ বিভিন্ন ট্রেন চলাচল করছে।
রেলওয়ে সূত্র জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলীয় জোনে সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৩৭ সালে মেঘনা নদীতে প্রথম সেতু নির্মিত হয়। দীর্ঘ ৮০ বছর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ডাবল লাইন নির্মাণের সুফল তুলতে দ্বিতীয় ভৈরব সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। পুরাতন ও নতুন দুটি সেতু দিয়েই ট্রেন চলাচল করবে। একটি দিয়ে ডাউন ট্রেন অপরটিতে আপ ট্রেন চলাচল করবে। সেতুগুলো যাতে ডুয়েল গেজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এজন্য সেতুর উপর ডুয়েল রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। রেলওয়ে এপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদিত হয় ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর। ১২টি পিলার ও নয়টি স্প্যান বিশিষ্ট ৯৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাত মিটার প্রস্থের ভৈরব সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৭ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা। ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন-এফকন জেভি’র সাথে ভৈরব সেতু নির্মাণে চুক্তি হয়। একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দ্বিতীয় ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে তা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। একইভাবে ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিতাস সেতু নির্মাণের চুক্তি হয় নিয়োজিত ঠিকাদার গ্যানন-এফএলসিএলের সাথে। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১৯১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে তিতাস সেতুটি।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব