বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। পরে ফের নির্বাচন দেওয়া হবে। যথারীতি তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। তাদের প্রতিশ্রুতির কারণে তখন আমাদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার কথা বিশ্বাস করা যে ভুল ছিল তা পরে প্রমাণিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বর্তমান হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিপ্পান্ন দিন পর নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসে 'যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত' আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন থেকে লাগাতার অবরোধ ডেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গত দুই মাস ধরে এ কার্যালয়েই তিনি অবস্থান করছেন। বিকেল ৪টা ৪৭ মিনিটে খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য শুরু করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে একটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট চলছে। এ সংকটের স্রষ্টা আওয়ামী লীগ, আরও পরিষ্কার করে বললে শেখ হাসিনা। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগই তারা রাখেনি। তিনি বলেন, বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার স্বেচ্ছাচারের মতো জাতির কাঁধে চেপে বসেছে। তারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার তাদের নেই। অনেক বিবাদের পর বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিল যে, কোন দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব না। তত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি হয়েছিল। এই ব্যবস্থার অধীনে কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। তত্ত্বাবধায়কের ভুল-ত্রুটি থাকলে তা ঐক্যমতের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব ছিল। আওয়ামী লীগ এককভাবে তা বাতিল করে দলীয়ভাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক অপেক্ষা করে অবশেষে আমরা বাধ্য হয়ে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছি। এ সংকট 'যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত' আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। এই আন্দোলন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার। এই আন্দোলন ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দেশ গড়ার। আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রক্রিয়ায় চললে খুব তাড়াতাড়ি আমরা সফলতায় পৌঁছাতে পারবো।
চলমান সহিংসতা নিয়ে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তারা কিছু যানবাহন রাস্তায় নামায়। পেট্রোলবোমা মেরে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। তারা তাদের ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, বিরোধী দল-মতের শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম করা হয়েছে। রাজনীতি করার স্বাধাবিক অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়। তারপরও একবছর অপেক্ষা করেছি। কারণ আমরা শান্তি ও সমঝোতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু বর্তমান সরকার আমাদের সভা-সমাবেশের অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করছে। শীর্ষস্থানীয়সহ সারাদেশে ১০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। রিজভীকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছে জনগণের ভোটের যে কোনো মূল্য নেই তারা তা প্রমাণ করেছে।
দলের যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে মুক্তি না দিলে পরিণতি ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ার জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার করেও তিনদিনে তা স্বীকার করেনি। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ নেই। মান্নার ক্ষেত্রেও সরকার নাটক সাজিয়ে পরে স্বীকার করেছে। এসবের পরিণতি ভাল হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের কোনো পদক্ষেপ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যার ফলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া ব্যাহত হচ্ছে। অথচ সরকারদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে সহিংসতা করার পরেও পার পেয়ে যাচ্ছে।
খালেদা আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের দেখামাত্র গুলি করার বেআইনী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দেওয়ার নামে দলীয় লোকজনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। দেশের জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এমন সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশে ‘কড়াকড়ি’ থাকলেও সংবাদ সম্মেলনের কারণে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সাংবাদিকদের গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার ওই কার্যালয়ে ঢুকতে দেয় পুলিশ। গত ১৯ জানুয়ারি এই কার্যালয়েই খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ