সংবাদ সম্মেলনে ব্লগারদের 'সীমা লঙ্ঘন' না করার পরামর্শ দিলেন পুলিশ বাহিনীর প্রধান এ কে এম শহীদুল হক। ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যাকাণ্ডের দুই দিন বাদে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে রবিবার পুলিশ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আইজিপি।
ছয় মাসের ব্যবধানে চার ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ বাহিনী। এ পরিস্থিতিতে আজ পুলিশের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল হক মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো লেখা না লেখার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কারও লেখা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো হলে সে ক্ষেত্রে পুলিশকে তা জানানোর পরামর্শও দিয়েছেন।
তিন ব্লগার খুন হওয়ার পর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে থানায় জিডি করতে গেলেও কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তা না নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে ফেইসবুকে লিখে গিয়েছিলেন নিলয়।
প্রাথমিক তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে আইজিপি বলেন, ''তবে এখনও তদন্ত চলছে। যদি তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে সেই পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।''
নিলয়ের আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা চলাকালে টিএসসির সামনে খুন হন অভিজিৎ রায়। এর কয়েক মাসের মধ্যে ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় তেজগাঁওয়ে তার বাসার কাছে। তারপর সিলেটে সড়কে খুন করা হয় অনন্ত বিজয় দাশকে। তিনটি হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলেও প্রকৃত খুনি কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে এসব মামলায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাবুর হত্যাকাণ্ডস্থল থেকে জনতা দু'জনকে ধরে পুলিশে দেয়।
এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে আইজিপি বলেন, ''এখানে আমার একটা বক্তব্য আছে। মুক্তমনা, তারা তো থাকবে। তাদের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ আছে। তবে আমাদের যে জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে- আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা অপরাধ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারীর সাজা ১৪ বছর কারাদণ্ড। তবে কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে তাকে হত্যা করতে হবে, তা মানা যায় না।''
কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে, তার বিরুদ্ধে মামলা হলে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান শহীদুল হক।
''পাশাপাশি যারা মুক্তমনা লেখেন, তাদের কাছে এবং আপনারা যারা আছেন তাদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন সীমা লঙ্ঘন না করি। এমন কিছু লেখা উচিত নয়, যেখানে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে, বিশ্বাসে আঘাত আনে।''
আইজিপি বলেন, ''নিলয়ের হত্যা কোনোভাবে কাম্য নয়। হত্যাকারীকে খুঁজে বের করা হবে।''
নিলয়সহ আগের ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার নামে বার্তা এসেছে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে।
জঙ্গি দমনে পুলিশ ৮০ ভাগ সফল দাবি করে আইজিপি বলেন, জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত ৬৩২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫১৬টিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ২ হাজার ৫৪৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ প্রধানের সংবাদ সম্মেলনের আগে দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা হয়। সেখানেও শিশু ও ব্লগার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই সভায় সভাপতিত্বকারী শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, এই পর্যন্ত আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাতজন, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের ঘ্টনায় একজন, ওয়াশিকুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজন এবং আসিফ মহীউদ্দিন হত্যাচেষ্টার মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তিনি বলেন, ''যে অপশক্তি ৯৩ দিন দেশে অরাজকতা তৈরি করেছিল, পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছিল, সেই অপশক্তি আজ সু-পরিকল্পিতভাবে এটা ঘটাচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি দেখানোর জন্য।''
শিশু হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আলোচিত শিশু হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেফতারে পুলিশ সক্রিয় বলে জানান আইজিপি।
তিনি জানান, সিলেটর সামিউল আলম রাজন হত্যার ঘটনায় ১২ জন, খুলনার রাকিব হাওলাদার হত্যার ঘটনায় তিনজন ও বরগুনার রবিউল হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাজন হত্যাকাণ্ডের আসামি কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। যদি তাকে (কামরুল) আনতে দেরিও হয়, তাহলেও চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানান আইজিপি।
অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরির্দশক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন শহীদুল।
তার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও অংশ নেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ এই কর্মকর্তারা।
ওই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল হক, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু উপস্থিত ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/০৯ আগস্ট ২০১৫/ এস আহমেদ