আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে বলে যানবাহন বেড়েছে। ফলে যানজটও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
সোমবার ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। এ কারণে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে।
“এই ১৩ বছরে অনেকগুলো উন্নতির কারণেই ট্রাফিক সিস্টেমটা.. ট্রাফিক প্রবলেমটা আমাদের কাছে একটা হ্যাডেক হয়ে গেছে। ট্রাফিক সমস্যা নাই পৃখিবীতে এমন কোনো জায়গা নাই। আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি তা মাথায় নিয়ে সে বিবেচনায় সমাধানের চিন্তা করতে হবে।”
এর আগে গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদে একটি বিলের ওপর একটি আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ যদি আরও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকে তাহলে উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে।
সোমবার ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সাড়ে চার হাজার ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশ হবে। তখন এর বহুমুখী প্রভাব পড়বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
“আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে গাড়িঘোড়া বাড়বে। এটা হলে গ্রামের মানুষও অনেকটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতে পড়বে। উপজেলা পর্যায়েও যানজট হবে, ফলে এখন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
ঢাকা ইউলিটি রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘অসহনীয় যানজট: সমাধান কী?’ শীর্ষক সংলাপে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ছাড়াও নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবহন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ঢাকায় অনেক মেগাপ্রজেক্ট করা হলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেগুলো কোনো কাজে আসেনি।
“আমি অনেক বিনিয়োগ করতে পারি, কিন্তু রাস্তা ঠিক নাই, ভূমি ব্যবহারের কোনো পথ আমরা রাখিনি। সে কারণে আমরা এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছি না। সমস্যা সমাধানে গণপরিবহনের অবকাঠামো বানাতে হবে, কোনোভাবেই ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য নয়। গণপরিবহনের ওপর জোর দিতে হবে। ফ্রাঞ্চাইজির আওতায় এসব বাস চালাতে হবে।
“আমাদের পথ খোলা আছে সফল যারা হয়েছে তাদের পথে হাঁটলে গণপরিবহনের জোর দিয়ে যদি আমরা আমদের উন্নয়ন কাজ করি তাহলে আমাদের সমস্যা এখনও সমাধান করা সম্ভব।”
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডে সচিবদের জন্য আবাসন করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে একসঙ্গে ১১৪ জন সচিব-অতিরিক্ত সচিব গাড়ি নিয়ে বের হন। তাদের অনেকে এ সময় সড়কের উল্টো দিকে গাড়ি নিয়ে চলেন, এ সময় যানজট তৈরি হয়।
“১১৪ জন সচিব, অতিরিক্ত সচিবদের যদি বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাস বা মিনিবাসে করে সচিবালয়ে নিয়ে আসেন তাহলে ওই ১১৪টি গাড়ি রাস্তায় বের হবে না। আপনারা কি পারবেন ওই কাজটি করাতে? প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে কাজ করতে হয়।”
ঢাকায় যানজট সমস্যার সমাধানে কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। চাইলে এখনও যানজট নিরসন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট পরিস্থিতির উন্নতি কিভাবে হয়েছে সে তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, যানজট নিরসনে কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে।
“নারায়ণগঞ্জের পুলিশ শহর যানজটমুক্ত ঘোষণা দেওয়ার মাত্র কয়েকদিনের মাথায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলমুক্ত করেছেন। সেখানে এখন যানজট হয় না।”
“এইভাবে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা ‘অমুক করতে হবে, তমুক করতে হবে, এটা করা উচিত এটা করা উচিত’ বলেই চলেছি। কিন্তু করবেটা কে?”
ডুরার সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সংলাপ সঞ্চালনা করেন ডুরার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ শফিক। এতে ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম, যানজট ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মোল্লা বক্তব্য রাখেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত