উপযুক্ত প্রমাণ দিলে ভারতে বসবাসকারী 'অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিক'দের ফেরত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপদেষ্টা গওহর রিজভী। শুক্রবার কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেলে ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ইষ্ট ২০১৮’ অনুষ্ঠানে ‘ফ্রেন্ডস এন্ড নেবারস-শেয়ারিং মোর দ্যান এ বর্ডার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ৩০ জুলাই ভারতের অাসামে প্রকাশিত হয় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-এর চূড়ান্ত খসড়া তালিকা। ওই তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় ৪০ লাখের বেশি নাগরিকের নাম। এরপরই এই ইস্যুতে দেশটিতে বিতর্ক শুরু হয়। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সম্প্রতি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ বলে আখ্যায়িত করে এদের দেশ থেকে বিতাড়ণের কথা বলেছেন।
সেই বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে গওহর রিজভীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন অাসামের অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এমনকি সেদেশের গণমাধ্যমগুলিও এই ইস্যুটিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বাংলাদেশের যথেষ্ট জনপ্রিয়। আমিও গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা রয়েছি, কিন্তু ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে কখনও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেনি।
তিনি বলেন ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণের বিষয়টি সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এটা একটা দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া এবং অদূর ভবিষ্যতে দুই দেশ হয়তো এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে। বাংলাদেশ তাদের নাগরিকদের অবশ্যই ফেরত নেবে সেক্ষেত্রে পাঁচ জন, দশ জন, পাঁচ শতাধিক বা পাঁচ হাজার সংখ্যাটা যাই হোক না কেন-কিন্তু তারা যে বাংলাদেশি নাগরিক সেটা ভারতকেই প্রমাণ করতে হবে এবং একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। ভারতকে বলতে হবে যে কারা কারা আমাদের দেশের নাগরিক। আমরা ওদের ফেরত নিতে প্রস্তুত আছি।’
তবে এদিন অনেক প্রশ্নেরই খোলামেলা উত্তর দেন বাংলাদেশের এই কূটনীতিবিদ। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে রিজভীর অভিমত বাংলাদেশ প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিলেও আন্তর্জাতিক বিশ্বের উচিত একযোগে এই মানবিক ইস্যুতে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। কারণ এটা কেবলমাত্র বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, এটা একটা আন্তর্জাতিক সমস্যাও বটে। তাই সকলেরই উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সব ধরনের সহায়তা করে যাচ্ছে কিন্তু দেশ আশ্রয় নেওয়া প্রতিটি রোহিঙ্গাদের নথি সংগ্রহ করা হয়েছে, মিয়ানমারে পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং এই রোহিঙ্গাদের ফেরতের সময় হলে মিয়ানমারকে তাদের সম্মান দিতেই হবে।’
গত বৃহস্পতিবার মনিপুরের মোরে সীমান্ত দিয়ে ভারতে অবস্থান করা সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে রিজভি বলেন ‘আমি মনে করি যতক্ষণ না পর্যন্ত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত ভারতের উচিত নয় রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত পাঠানো।’
যদিও রিজভীর আগে ওই অনুষ্ঠানেই ‘ইনসাইডার আউটসাইডার-সিটিজেন কৌন’ শীর্ষক এক আলোচনা চক্রে উপস্থিত থেকে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মধাব জানান, অাসামে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিতকরণ করতে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মানা হবে এবং কোন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকই এনআরসি থেকে বঞ্চিত হবে না। তাঁর স্পষ্ট জবাব সাংবিধানিক প্রক্রিয়া না মেনে ভারত থেকে কোন নাগরিককেই অন্য দেশে ফেরত পাঠানো হবে না। যদিও তার অভিমত কোন রাষ্ট্রই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিজেদের দেশে জায়গা দেয় না। আরব আমিরাতও গত বছর প্রায় সাত হাজার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠিয়েছে। তারা কেউ পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা ভারতের নাগরিক।
অাসামের এনআরসি খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া নাগরিকদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাম মাধব জানান ‘যারা বাদ পড়েছে তারা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য দুই মাস সময় পাবেন। এমনকি চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়ার পরও কোন নাগরিক ফরেনারস ট্রাইবুন্যাল এবং পরে হাইকোর্টে আবেদন জানাতে পারেন।
এদিন রিজভীর সাক্ষাতকারটি নেন ইন্ডিয়া টুডের ম্যানেজিং এডিটর রাহুল কানওয়াল, অন্যদিকে রাম মাধবের সাক্ষাতকার নেন ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের কনসাল্টিং এডিটর রাজদীপ সারদেশাই।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল