রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অজানা কাহিনী

সাইফ ইমন

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অজানা কাহিনী

প্রথম ব্রিটিশ নাবিক ভারতে আসেন ১৫৮২ সালে

কোম্পানির ইতিহাস শুরু হয়েছিল সপ্তদশ শতকে। পরবর্তীতে সাধারণ কোম্পানি থেকে ভারতের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য করার জন্য একক আধিপত্যের পক্ষে একটি সনদও প্রদান করেছিলেন। প্রথমে মসলার ব্যবসা দিয়ে উপমহাদেশে বাণিজ্য শুরু করে।

সর্বপ্রথম কোনো ব্রিটিশ নাবিক ভারতে আসেন ১৫৮২ সালে। এর আগে ভারত থেকে ব্রিটেনে তরী-ভেড়ানো জাহাজগুলো দেখেছিল ইংরেজরা। সেগুলো অনেক বেশি মূল্যবান ও অসাধারণ সব পণ্যে ভরপুর থাকত। ইতিহাস অনুযায়ী ১৫৯৩ সালে ব্রিটেনের বন্দরে একটি পর্তুগিজ জাহাজ ধরা পড়ে। সেই জাহাজে ছিল প্রায় ১৫০০ টন মালামাল ও ৩৬টি পিতলের কামান,

সোনা, মসলা, সুতি কাপড়, সিল্ক, চিনামাটির বাসনপত্র, মুক্তা ও হাতির দাঁত। এই জাহাজ দেখে ব্রিটিশরা ভারতে বাণিজ্য করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়। এর মাধ্যমেই জন্ম হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির।

 

বণিক থেকে রাজন

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে এসেছিল বাণিজ্য করার লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু অবস্থা বুঝে তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আনুকূল্যে শাসনকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়। এ প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে- বণিকের মানদণ্ড পোহালে শর্বরী,  দেখা দিল রাজদণ্ড রূপে। এদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার জন্য ষোড়শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত করে একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি। এর সরকারি নাম ছিল ‘ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’। ১৬০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রানী প্রথম এলিজাবেথ এই  কোম্পানিকে তখনকার ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে বাণিজ্য করার রাজকীয় সনদ প্রদান করেন। এ সনদ কোম্পানিটিকে ২১ বছর পর্যন্ত পূর্ব ভারতে একচেটিয়া বাণিজ্য করার প্রাধিকার অর্পণ করেছিল। তবে পরবর্তীকালে এ কোম্পানি ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এবং ১৮৫৮ সালে বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করে। অতঃপর ব্রিটিশ সরকার সরাসরি ভারত শাসন শুরু করে। ভারতে অনেক কম সময়ের ব্যবধানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব বিস্তারের অনেক বড় একটা কারণ ছিল ১৮ শতকে মুঘল সম্রাটদের আকস্মিক পতন। এই সুযোগে ফরাসি কোম্পানি নিজেদের মুদ্রা ছাপাতে শুরু করে ভারতে এবং সেই সঙ্গে ইংরেজরাও তাদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে থাকে বেশি বেশি ভারতীয় নাগরিকদের সিপাহি হিসেবে নিয়োগ করে। এভাবেই ধীরে ধীরে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসনের দিকে এগিয়ে যায় কোম্পানি। অবশেষে ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের পরাজয়ের মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটে ইংরেজ শাসনের।

 

‘গোটা ১৮০০ শতক ধরে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে যে ধন প্রেরিত হয় তা অর্জিত হয়েছিল অপেক্ষাকৃত নগণ্য বাণিজ্যের দরুন ততটা নয়, যতটা সে দেশের প্রত্যক্ষ শোষণের দরুন এবং যে বিপুল ঐশ্বর্য জোর করে আদায় করে ইংল্যান্ডে পাচার করা হয়েছিল তার দরুন।’

-কার্ল মার্কস,

২৪ জুন, ১৮৫৩

কোম্পানির দখলে ভারতবর্ষ

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান যখন দেখলেন তাদের অনুগত নবাবরা তাদেরই বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন। তখন আর তাদের বিশ্বাস করতে পারল না। এর আগে ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে কিছু বাঙালির বিশ্বাসঘাতকতার সাহায্যে ইংরেজরা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। পরবর্তীতে নবাব মীর কাসিম ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। পর পর তিনটি যুদ্ধ হয়। মীর কাসিম আত্মগোপনে চলে যান। হত্যা করা না গেলেও নবাব পরাজিত হলেন, কিন্তু হার মানলেন না। ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়ান। ওইদিকে আত্মগোপনকারী নবাবও একদম অলস বসে নেই। তিনি ভারতবর্ষের অন্য নবাবদের সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করছিলেন। স্বয়ং মুঘল সম্রাটের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়। এর মাধ্যমে বড় একটি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে উপমহাদেশ। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধের নাম ছিল বক্সার যুদ্ধ। বক্সার যুদ্ধের পর ইংরেজরা অযোধ্যা, বেনারস এবং এলাহাবাদ দখল করে নেয়। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির খেসারতস্বরূপ সুজা-উদ-দৌলা ইংরেজদের প্রায় ৫০ লাখ রুপি জরিমানা দেন। পরবর্তীতে ইংরেজরা ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের সম্পূর্ণ দখল করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের গাজীপুর এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল কোম্পানির দখলে চলে আসে। কয়েক বছর পর ইংরেজরা সম্রাটকে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করে দিলে মুঘলরা ইংরেজদের দাসে পরিণত হয়ে যায়। তারা দ্রুত বাংলার প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করে ফেলে। বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে উপমহাদেশে পুরোপুরিভাবে কোম্পানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

 

অগণিত সম্পদ চুরি

১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সাল। দীর্ঘ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামে ভারতবর্ষে অরাজকতা চালিয়েছিল ব্রিটেন। যদিও গ্রেট ব্রিটেনের পক্ষ থেকে বরাবরই ভারতীয় উপমহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন তাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি হতো বলে দাবি করে। সেই দাবি তোলা হয় ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর। তারা দাবি করে, ভারতবর্ষ থেকে তাদের কোনো আর্থিক সুবিধা হতো না। উল্টো ভারত উপমহাদেশ তাদের খরচের একটি খাত হিসেবেই ছিল। ব্রিটেনের এমন বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ব্রিটিশরা উপমহাদেশের মানুষের প্রতি এত বছর অনুগ্রহ করেছিল। কিন্তু কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে অর্থনীতিবিদ উষা পটনায়েকের প্রকাশিত গবেষণা ওই মিথের দুয়ার খোলে। গবেষণায় কর এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত দুই শতাধিক নথি থেকে জানা যায়, ব্রিটিশরা ভারত রাজত্বের ১৭৩ বছরে প্রায় ৪৫ লাখ কোটি ডলার চুরি করে নিয়েছিল। যা বর্তমানে ব্রিটেনের মোট জিডিপির ১৭ গুণ। প্রকাশিত এসব নথি থেকে জানা যায়, বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই ব্রিটিশরা এমন লুটতরাজ চালাতে সক্ষম হয়েছিল। প্রথমদিকে তারা ভারতের উৎপাদকদের কাছ থেকে রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে পণ্য কিনত। কিন্তু ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুরো ভারতবর্ষের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পাল্টে যায় সব। তারা ভারতবাসীর কাছ থেকে কর নিত, আবার সেই করের টাকা দিয়ে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের কাছ থেকে পণ্য কিনত। ফলে তারা আসলে ভারতবাসীদের কাছ থেকে ফ্রিতেই পণ্য নিত। এটি বড় আকারের চুরি হলেও যেহেতু কর আদায়কারী এবং পণ্যক্রয়কারী গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন ছিল, তাই কেউ বিষয়টি ধরতে পারেনি। চুরি করা এসব পণ্য ব্রিটেনে ব্যবহৃত হতো। তবে বেশির ভাগ পণ্যই পুনঃ রপ্তানি করা হতো অন্যত্র। ১৮৪৭ সালে ব্রিটেনের রাজা ভারতবর্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা কর ও বাণিজ্যের নতুন একটি পদ্ধতি চালু করে। তাতে বলা হয়েছিল, ভারত থেকে আমদানি করতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শেষ পর্যন্ত লন্ডনেই লেনদেন শেষ করতে হবে। কারণ আমদানিকারক দেশ বা প্রতিষ্ঠানকে দায় শোধ করতে হতো বিলের মাধ্যমে, যা কেবল ব্রিটিশ রাজাই ইস্যু করতেন। লন্ডন থেকে সোনা বা রুপার বিনিময়ে তা কিনতে হতো। আমদানিকারকরা ভারতে সেই কাউন্সিল বিল দিয়েই পণ্য কিনত। ভারতীয়রা যখন সেই বিল ক্যাশ করতে চাইত তখন তাদের ক্যাশ করে দেওয়া হতো করের রুপি দিয়েই, যা তাদের কাছ থেকেই কর আকারে নেওয়া হয়েছিল। ফলে তাদের কোনো অর্থ দেওয়া হতো না। ব্রিটেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ভারত ব্রিটেনের কাছে দায়বদ্ধ ছিল। কিন্তু ঘটনা ছিল তার উল্টো। ভারতবর্ষ থেকে এভাবে অর্থ লন্ডনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণেই ভারতীয়রা ব্রিটেন থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়। এ অপ্রয়োজনীয় ঋণ দিতে পেরে ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হয়। ভারতবর্ষ থেকে নেওয়া এসব অর্থ তারা বিভিন্ন আক্রমণ, অভিযান, শত্রুপক্ষকে ঠেকানোর কাজেও ব্যবহার করত।

 

বাণিজ্য শুরু যেভাবে

ভারতে আগমনকারী প্রথম ব্রিটিশ সমুদ্রযানটি যাত্রা শুরু করে ১৬০১ সালে। কিন্তু তাদের এই যাত্রা শুরুতে ভারতের উদ্দেশ্যে ছিল না। তারা চলছিল ইন্দোনেশিয়ার দিকে; যেখানে গোলমরিচ ও গরম মসলার জন্য তখন বিখ্যাত ছিল। হঠাৎ যাত্রাপথে ওই অভিযানের ৪টি জাহাজই এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়। নিরক্ষরেখার কাছে এসে জাহাজগুলো পর্যাপ্ত বাতাসের অভাবে থেমে যায় এবং ওই সময় ৫০০ জন লোক নিয়ে যাত্রা শুরু করে। দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত আসতে আসতে ১০০ জনের মৃত্যু হয়। তখন একটা বন্দোবস্ত করার জন্য তারা বেশ কিছু তটরেখা যেমন : মাদাগাস্কার এবং সুমাত্রায় থামে। অবশেষে ১৬০২ সালে তারা ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের বান্তাম শহরে কিছু বণিক ও সহযোগীর দলকে রেখে নতুন করে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম জাহাজ ভারতে এসে পৌঁছায় ১৬০৮ সালে সুরাত বন্দরে। ১৬১৫ সালে রাজা জেমসের গুপ্তচর থমাস রো সুরাতের মুঘল সম্রাটের দরবারে পৌঁছায় এবং সুরাতে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হয়ে অনুমতি আদায় করে। ধীরে ধীরে ইংরেজ বণিকরা সারা ভারতে তাদের ব্যবসা দ্রুত প্রসারিত করে।

 

এখনো ইতিহাসের সাক্ষী

এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান কার্যালয়টি। ১৭৭৭ সালে এটি প্রথম তৈরি করা হয়েছিল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভবনটি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মূলত তিন প্রকার পণ্য আমদানি করত ভারত থেকে এবং সেগুলো হলো- গোলমরিচ, কাপড় এবং চা। ১৬০০ সালের প্রায় পুরো সময় কোম্পানি শুধু  গোলমরিচের ব্যবসাই করেছে। কারণ গোলমরিচ তাদের কাছে অনেক বেশি জরুরি পণ্য। ইংরেজরা একবার ১৬৭৭ সালে ৩১৭৫ টন  গোলমরিচ আমদানি করে। আমদানিকৃত  গোলমরিচের  বেশির ভাগ লন্ডনে বিক্রি হলেও বেশ বড় একটা অংশ অন্যান্য দূরবর্তী  দেশ যেমন : পোল্যান্ড, রাশিয়া এবং অটোমান সাম্রাজ্যের বাজারেও  রপ্তানি করত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের দেশে তৈরি একধরনের মোটা কাপড় রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে  কোম্পানি সিদ্ধান্ত পাল্টে ভারতের কাপড় আমদানি করে ব্রিটেনে বিক্রি করে। প্রথমবার ভারতীয় কাপড় ব্রিটেনের বাজারে আসার পর সেখানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং ব্রিটেনে ভারতীয় কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ১৬৬৪ সালে প্রথম বান্তাম থেকে ৫০ কেজি চা আমদানি করে কোম্পানি এবং ১৬৭০ সাল পর্যন্ত এরকম অল্প পরিমাণেই আমদানি করতে থাকে। এরপর বিভিন্ন প্রদেশে বাণিজ্য করার সুযোগ লাভের পর বেশি বেশি করে চা আমদানি শুরু করে। ১৭১৩ সালে কোম্পানি মোট ৯৭,০৭০ কেজি চা আমদানি করে এবং পরবর্তীতে এই পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়।

 

লুকিয়ে আছে অশুভ ইতিহাস

ইংরেজরা এই উপমহাদেশ শাসন করেছে; কিন্তু এই কথার পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য অশুভ ইতিহাস। অনেকের মতে, ব্রিটিশ সরকার নয় বরং একটি বিপজ্জনক ও নিয়ন্ত্রণহীন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ১৮ শতকের শেষ দিকে ভারতকে শাসন করা শুরু করে। এই কোম্পানির সদর দফতর ছিল লন্ডনে এবং ভারতে এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গভর্নর লর্ড ক্লাইভ। ১০০ বছরের শাসনকালের ইতিহাসে সদর দফতরে মাত্র ৩৫ জন স্থায়ী কর্মচারী নিয়ে এত বড় একটি কোম্পানি পরিচালনা করার দরুন এই কোম্পানি করপোরেট দক্ষতার রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। মাত্র ৩৫ জন কর্মচারী যেভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে নিজস্ব মিলিটারি বাহিনী তৈরি করা থেকে শুরু করে সেখানকার বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুটতরাজ ও আয়ত্ত করে  সেটা করপোরেট দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল। করপোরেট জুলুমের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। আমাদের এই বাংলা থেকে লুট হওয়া সম্পদের অনেক বড় একটা অংশ গিয়েছিল লর্ড ক্লাইভের পকেটে। ক্লাইভ যখন ব্রিটেন ফেরত যান তখন তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল তৎকালীন বাজারমূল্যে প্রায় ২৩৪,০০০ ইউরো সমমানের। এর মাধ্যমে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। পলাশী যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হয়েছিল মিলিটারি পরাক্রম দিয়ে নয় বরং বিশ্বাসঘাতকতা, জাল চুক্তি এবং ঘোষখোর ব্যাংকারদের সাহায্যে। এই যুদ্ধে জয়লাভের পর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজ কোষাগার থেকে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ইউরো ব্রিটেনে পাচার করা হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোষাগারে। বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ইউরো যায় কোম্পানির কোষাগারে এবং ২৩ মিলিয়ন ক্লাইভের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। প্রায় সব ধনসম্পদ ১০০টি নৌকায় ভরে কোম্পানির কলকাতার প্রধান কার্যালয় ফোর্ট উইলিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

 

 

সর্বশেষ খবর