হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পইল গ্রামে বসেছে দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাসী মাছের মেলা। এই মেলায় উঠেছে বিরাট বিরাট সব মাছ। দুই শতাধিক দোকানে এসব মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। দূর-দূরান্ত থেকে দলে দলে লোকজন মেলায় আসেছেন মাছ কিনতে। খালি হাতে ফিরছেন না কেউ। সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ কিনে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।
মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বাড়িতে এসেছে মেয়ে ও জামাই। নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আত্মীয়-স্বজনকেও। মেলায় ৪০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইর মাছের দাম হাঁকানো হয় ৫০ হাজার টাকা। উমেদনগর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুন নুর মাছটি ভৈরব থেকে কিনে আনেন।
পইলের মাছের মেলাকে ঘিরে রবিবার ভোর থেকে এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে এমন উৎসব আমেজ। অন্যবারের মতো এবারও মেলার আকর্ষণ ছিল নদীতে ধরা বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ।
আছে নদীর বাঘাআইড়, বোয়াল, আইড়, পাঙাশ, চিতল, কাতলা, রুই, সিলভার কার্পসহ হরেক পদের বড় বড় মাছ। এছাড়াও পুটি, চিংড়ি, কৈ, চাপিলা, চান্দা মাছ উঠেছে ব্যাপক হারে।
মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ হলেও এতে কৃষি উপকরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ভোগপণ্য, আখ, শিশুদের খেলনার দোকানও ছিল উল্লেখযোগ্য।
রবিবার সকাল থেকেই মাছ মেলায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বিকেলে এ মেলায় লোকে লোকারন্ন হয়ে যায়। এ মেলা দেখার জন্য শুধু হবিগঞ্জ নয়, সিলেট, মৌলভীবাজর, সুনামগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর লোক আসেন মেলায়।
মানুষজন মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত। শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়, মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।
মাছ বিক্রেতা আরব আলী জানান, বিভিন্ন নদী ও হাওর থেকে মাছ আসে এখানে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে চলে মাছ ধরারও উৎসব। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি বছরই এ মেলায় মাছ নিয়ে আসি। বাজারের তুলনায় মেলায় মাছের দাম বেশি হলেও সবাই আনন্দের সঙ্গে মাছ কেনেন।’
পইল গ্রামের সন্তান ডা. সৈয়দ এম আবরার জাবের জানান, মেলায় প্রতি বছরই বাঘাআইড় মাছ ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকার উপরে বিক্রি হয়। এ বছর বড় বড় বাঘাআইড় মাছ উঠেছে মেলায়। একেকটি মাছের ওজন হবে ৪০-৬০কেজি।
পইল মাছ মেলার ঐতিহ্য সম্পর্কে পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ জানান, ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘হাওরের কেমিকেলমুক্ত মাছ এ মেলায় উঠছে। লোকজন সাদরে এসব মাছ ক্রয় করে নিচ্ছেন। মেলাকে সামনে রেখে চাষীরা সারা বছর বড় মাছটি সংরক্ষণ করেন। এ ধরনের মাছের মেলা জেলার আর কোথাও নেই।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ জানুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব