কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘দেশের সুগারমিলগুলো অনেক পুরনো। চিনি উৎপাদন প্রযুক্তিও আধুনিক নয়। অন্যদিকে মাঠে আখের উৎপাদনশীলতা কম। এতে চিনি উৎপাদনে খরচ অনেক বেশি হয়। বর্তমানে ১ কেজি চিনি উৎপাদন করতে যে খরচ পড়ে তা কমিয়ে আনা যায় কি না, যাচাই করা দরকার। প্রয়োজনে ‘আধুনিক প্রযুক্তির ১টি মডেল সুগারমিল’ পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা যেতে পারে। এর সাথে মাঠে উন্নত জাতের আখের চাষ। তারপরও যদি দেখা যায়, চিনির উৎপাদন খরচ কমছে না। আখ চাষ লাভজনক না হলে দেশে চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া দরকার।’
আজ শুক্রবার টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) আয়োজিত ‘সুগারক্রপ চাষের আধুনিক প্রযুক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএসআরআইর মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে বিএসআরআইর পরিচালক সমজিৎ কুমার পাল, জামালপুর উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার মহিউল আলম, টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আহসানুল বাসার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মন্ত্রী বলেন, আখের সাথে সাথী ফসল চাষ করতে হবে। বিএসআরআই উদ্ভাবিত উন্নত জাতের সাথে সাথী ফসল চাষ করলে আখচাষ লাভজনক হবে। কৃষকেরা আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, দেশে আখ উৎপাদন ও মাড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়লে, আখ চাষ লাভজনক হবে।
বিএসআরআই জানায়, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সুপারিশ অনুযায়ী জনপ্রতি বছরে ১৩ কেজি চিনি অথবা গুড় গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে হিসাবে দেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ টন চিনি ও গুড় প্রয়োজন। বর্তমানে উৎপাদিত হয় প্রায় ৬ লাখ টন। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৬৮ লাখ টন চিনি আর ৫ দশমিক ৩২ লাখ টন গুড়। বছরে ঘাটতি ১৪ লাখ টন। ঘাটতি পূরণের জন্য দরকার আরও বেশি গবেষণা ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্প্রসারণ। সেলক্ষ্যে বিএসআরআই কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আখের ৪৮টি জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে চিবিয়ে খাওয়া ও রস পান উপযোগী ৩টি, বন্যা সহিষ্ণু ৯টি, জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ১০টি, খরা সহিষ্ণু ৭টি, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ৬টি উল্লেখযোগ্য। আখের সাথে সাথীফসল হিসেবে আলু, পিঁয়াজ, রসুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ডাল, তেল, মশলা প্রভৃতি ফসল চাষের প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছে সংস্থাটি।
এ ছাড়া, বিএসআরআইর মহাপরিচালক ড. আমজাদ জানান, যেসব স্থানে অন্যান্য ফসল কম চাষ হয় সেখানে চাষের উপযোগী জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। খরাপীড়িত, বন্যাপ্রবণ, জলাবদ্ধতা, চর, হাওড়, লবণাক্ত ও পাহাড়ি এলাকায় আখ চাষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চিবিয়ে খাওয়া ও রস পান উপযোগী জাতের আখ চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।
সূত্র : বাসস
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ