ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো সমাজের প্রত্যেক স্তরে বিদ্যমান। এমনকি প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলে পুরুষ ম্যুরালগুলো হলের বাইরে, আর রোকেয়া হলে রোকেয়ার ম্যুরালটি ভেতরে। এটা দেখে প্রশ্ন জাগে- নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়া কি আজও অবরোধবাসিনী?
আজ শুক্রবার ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে ''আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৫: বাংলাদেশের বাস্তবতায় নারী অধিকার'' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রতিদিন।
জিন্নাতুন নুরের সঞ্চালনায় রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, নারীর পোশাকেও পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব। তাদের পোশাকে পকেট নেই। অর্থাৎ নারীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নেই। পুরুষের পোশাকে যেমন পকেট আছে, তেমনি তারা সবসময় যে ব্যাগটি বহন করে তার নাম মানিব্যাগ অর্থাৎ টাকার ব্যাগ। আর নারীদের ব্যাগের নাম ভ্যানিটি ব্যাগ।
তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুকমির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিশু থাকবে কেন? নারী থাকলেই কেন সেখানে শিশু জুড়ে দিতে হবে? টিভি বিজ্ঞাপনগুলোতেও গৃহকর্মের বিষয়গুলো নারীকে দিয়ে করানো হয়। মসলার বিজ্ঞাপনে নারী রান্না করে আর পুরুষ খায়। বিজ্ঞাপনে নারী এখনও শুধু পিল আর চিপস খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কাপড় কাঁচা সাবানের বিজ্ঞাপনেও নারীকে দিয়েই কাপড় পরিস্কার করানো হয়। এমনকি বৌ-শাশুড়ির ঝগড়া দেখানো হচ্ছে বাসন মাজা নিয়ে। এগুলো পুরুষতান্ত্রিকতার কাঠামোকেই ধরে রাখছে। মটরসাইকেলের পেছনে নারীদের যেভাবে একদিকে পা দিয়ে বসানো হয় তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। মনে করা হয় নারীর দুই দিকে পা দিয়ে বসাটা দাম্ভিক। এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তাহলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় থেকে সবাই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে ও সচেতন হতে পারবে।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান এখনও রূপকথার গল্পের রাজকন্যার মতো। যেখানে একজন নারী বন্দি থাকবে আর একজন পুরুষ গিয়ে তাকে সোনার কাঠি-রূপার কাঠি দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসবে। পুরুষতান্ত্রিক এ কাঠামো বদলাতে হবে। কারণ এ কাঠামো পুরুষের জন্যই বোঝা। এজন্য পুরুষকেই আগে বদলাতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/০৬ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ