ফুটবলের উত্তেজনা ও উন্মাদনার ধারক-বাহক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা! বিশ্বের যত বড় ফুটবল টুর্নামেন্টই হোক না কেন, ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা না থাকলে যেন জমে ওঠে না। ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' হয়ে ওঠার বড় কারণও এ দুই দেশ। বিশ্বের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে দুই দেশের সমর্থক খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বকাপের সময় তো গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়! অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের আকাশেও ওড়ে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা। সারা বিশ্বই উগ্রীব হয়ে থাকে দুই দেশের সম্মুখ সমর দেখার জন্য।
ফুটবল বিশ্বকাপের গত ১৯টি আসর মিলে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে মাত্র ৪ বার। লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে সাম্বার দেশটি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে দুইবার জিতেছে ব্রাজিল, একবার আর্জেন্টিনা, আর একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবে উভয় দেশের মধ্যে ৯৫ বারের দেখায় বেশি জয় আর্জেন্টিনারই। আলবেসিলেস্তরা জিতেছে ৩৬ বার, ব্রাজিলের জয় ৩৫টি, বাকি ২৪টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। আবার গোল করার দিক থেকেও এগিয়ে আর্জেন্টিনাই। এ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনরা মোট ১৫১ বার তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের জালে বল জড়িয়েছে, ব্রাজিলের গোল সংখ্যা ১৪৫। তবে সব মিলে রণক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপে সেরা ব্রাজিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফুটবলে দুই দেশের মধ্যে লড়াইটা সব সময়ই সমানে সমান চলেছে। কখনো ব্রাজিল এগিয়ে গেছে, আবার কখনোবা আর্জেন্টিনা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চ্যাম্পিয়নশিপগুলোতে দেখা যায় দুই দেশই এ পর্যন্ত ২৫ বার করে চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে মাত্র দুইবার (১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সাল), ব্রাজিল ৫ বার (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ সাল)। কিন্তু লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে আবার আর্জেন্টিনার কাছে সুবিধা করতে পারেনি ব্রাজিল। আলবেসিলেস্তরা যেখানে ১৪ বার কোপা আমেরিকা কাপে চ্যাম্পিয়ন, সেখানে ব্রাজিল জিতেছে মাত্র ৮ বার। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট কনফেডারেন্স কাপে আবার এগিয়ে 'জাগো বনিতো'ই। তারা জিতেছে ৪ বার। আর আর্জেন্টিনা জিতেছে মাত্র একবার। অলিম্পিকের আসরে দুইবার বাজিমাত করেছে আকাশী-সাদারা। সেখানে হলুদ দুর্গ ব্যর্থ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপাতে ব্রাজিলের (৫ বার) চেয়ে এগিয়ে আর্জেন্টিনা (৬ বার)। অনূর্ধ্বব-১৭ বিশ্বকাপের ট্রফি ব্রাজিলিয়ানরা দুই দুইবার জয় করলেও তা আর্জেন্টাইনদের কাছে এখনো অধরাই রয়ে গেছে। ম্যাচের মতো শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রেও দুই দলের লড়াইটা সমানে সমান। দুই দলই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২৫টি করে শিরোপা জিতেছে।
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের মধ্যে প্রথম লড়াইটা হয় ১৯১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। সে ম্যাচে ৩-০ গোলে জয় পেয়েছিল আলবেসিলেস্তরা। তবে বিশ্বকাপে দুই দেশের প্রথম দেখায় জয়টা ব্রাজিলেরই। ১৯৭৪ সালে তাদের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা। পরের বিশ্বকাপেও দেখা হয়েছিল দুই প্রতিবেশীর। ৭৮-এর ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপেও জয় পায় ব্রাজিলিয়ানরা। স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ৩-১ গোলের বড় জয় পায় জাগো বনিতোরা। ওই ম্যাচটি ছিল আর্জেন্টিনার জন্য বড় হতাশার। ২২ বছর বয়সী তরুণ ম্যারাডোনাকে খেলতেই দেননি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা। ৮৪ মিনিটে আহত হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে মেঙ্েিকার রেফারি আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে লাল কার্ড দেখান। বিশ্বকাপে সর্বশেষ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দেখা হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তবে সেবার বরার্তো ক্যানিজিয়ার দুর্দান্ত গোলে ১-০ ব্যবধানে জিতে যায় আর্জেন্টিনা। শুধু তাই নয়, দুই দেশের সর্বশেষ দেখাতেও জয় আর্জেন্টিনারই। গত বছর নভেম্বরে বুয়েন্স আয়ার্সে অনুষ্ঠিত সুপার ক্লাসিকোর লড়াইয়ে টাইব্রেকারে জিতেছিল মেসিরা।