বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সহনশীলতার গুণ ধারণ করতে হবে

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

সহনশীলতার গুণ ধারণ করতে হবে

সহনশীলতা উত্তম গুণ। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে শান্তি অর্জনের জন্য শুধু নয়, জাতীয়ভাবে শান্তি অর্জনেও এর বিকল্প নেই। এ গুণটি এত মহৎ বলেই আল্লাহ নিজেকেই এ গুণের মাধ্যমে পরিচয় দান করেছেন। কোরআনে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তিনিই ক্ষমাশীল ও সহনশীল। মানুষ তো অক্ষমতার কারণে কতক সময় সহনশীল হয়ে থাকে। আল্লাহ তো কখনো অক্ষম নন, তার পরও তিনি হলেন সহনশীল।’ একইভাবে আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয় ইবরাহিম সহিষ্ণু, আল্লাহর প্রশংসাকারী, তওবাকারী।’ সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন গুণের শীর্ষে, সচ্চরিত্রের উচ্চ শিখরে। তিনি সহিষ্ণুতা, হৃদয়ের প্রশস্ততার গুণ দিয়ে মানুষের মন জয় করার মাধ্যমে ইসলামকে সবার কাছে প্রাণাধিক প্রিয় করে তুলেছিলেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দিনে রোজা ও রাতে ইবাদতের মাধ্যমে যে মর্যাদা অর্জিত হয় বান্দা সহনশীলতার মাধ্যমে সে মর্যাদা অর্জন করতে পারে।’ আমরা মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের সময় যে সহনশীলতা দেখিয়েছিলেন এবং সাহাবিদের সময় যেসব সহনশীলতার প্রতিফলন হয়েছিল তা গর্বভরে উল্লেখ করি, কিন্তু নিজেরা ধারণ করি না। একবারও ভেবে দেখি না আমাদের মতো অসহিষ্ণু, অসহনশীলদের জন্য সেসব সহনশীলতার বক্তৃতা কতটুকু মানায়? বরং আমাদের এসব আলোচনা শুনে অমুসলিমরা হাসি-ঠাট্টা করে। সহনশীলতার অভাবে মুসলমানদের মধ্যে যে বিরাজমান কলহ ও দ্বন্দ্ব আছে তা যখন অমুসলমানরা দেখে তখন তারা ইসলাম থেকে দূরে চলে যায়। এ থেকে প্রমাণিত হয়, আমাদের মতো মুসলমানরাই ইসলামের জন্য কলঙ্ক। কারণ আমাদের অনেকে মনে করে প্রতিপক্ষ থেকে প্রতিশোধ নিতে না পারলে বুঝি আমার শৌর্যবীর্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। একবারও চিন্তা করি না অসহনশীল হওয়ার কারণে নিজেদের মধ্যে যে আত্মকলহ সৃষ্টি হচ্ছে এ আত্মকলহ, দ্বন্দ্ব আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনবে। যেমনটি দেখতে পাচ্ছি আমরা বর্তমান বিশ্বে আত্মকলহে লিপ্ত মুসলিম দেশগুলোয়। সহনশীলতার অভাবে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অশান্তি হয়। সর্বোপরি জাতীয় জীবন বিপর্যস্ত হয়। কে কতটুকু সহনশীলতা দেখাবে? যে যে ক্ষেত্রে যত বেশি প্রভাব, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা রাখে সে সে ক্ষেত্রে তত বেশি সহনশীলতা দেখাবে। রসুল (সা.) মক্কাবাসীর জুলুমের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে মক্কা ত্যাগ করেছিলেন, যা ছিল ধৈর্য। মক্কা বিজয় ও একচ্ছত্র অধিকার অর্জন হওয়ার পর মক্কাবাসীকে আপন করে নিলেন, এ হলো সহনশীলতা। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বীর সেই ব্যক্তি নয় যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারে, বীর সেই ব্যক্তি যে রাগান্বিত হলে নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’ আল্লাহ বলেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান নয়’। যা উৎকৃষ্ট তা দিয়েই মন্দকে প্রতিহত করুন, তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু, এ চরিত্র তারাই অর্জন করে যারা সহনশীল। সহনশীল তারাই হয় যারা ভাগ্যবান। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহনশীল হওয়ার তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর