ফ্রান্স থেকে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কয়েকবছর আগে সিরিয়া বা ইরাকে ইসলামিক স্টেট গ্রুপে যোগ দিতে গিয়েছিল। যুদ্ধে হারার পর তাদের অনেকেই এখন কুর্দ বা সরকারি বাহিনীর হাতে আটক হয়ে ক্যাম্পে রয়েছে।
এই নাগরিকদের সেখানেই বিচার হোক চাইছে ফ্রান্স। তবে তাদের শিশু সন্তানদের দেশে ফেরত আনার অনুরোধ জানাচ্ছেন ফ্রান্সে থাকা তাদের দাদা-দাদীরা।
এ বছরের শুরুর দিকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আইএস বা জঙ্গি হিসাবে যে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা যুদ্ধ করেছেন, যেখানেই গ্রেফতার হোন না কেন, সেখানে তাদের বিচার করা হবে, তবে শিশুদের ফ্রান্সে ফিরিয়ে আনা হবে।
ইরাক এবং সিরিয়া থেকে এ পর্যন্ত ৭৭জন শিশুকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই শিশুদের 'টাইম বোম্ব' বলে বর্ণনা করেছেন প্যারিসের কৌসুলিরা, যাদের এখন মানসিক বিশেষজ্ঞ, সমাজকর্মী এবং নিরাপত্তা কর্মীরা নজরদারিতে রেখেছে।
এই কর্মসূচীর তত্ত্বাবধায়ক নিওহিয়েল ডোমেনা বলছেন, আমরা তাদের নজরদারিতে রেখে বোঝার চেষ্টা করছি, তারা কি আসলে ঘটনার শিকার নাকি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। বাবা মায়েদের কারণে তারা হয়তো ঘটনার শিকার হতে পারে, আবার তারা ভবিষ্যতে বিপদজনকও হয়ে উঠতে পারে, কারণ তারা অনেক ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছে। হয়তো তাদের কেউ কেউ এসব অপরাধের সাথে নিজেরাও জড়িতও হয়েছে, যা আমরা তদন্ত করে দেখছি।
অনেক আইসিস ভিডিওতে শিশুদের নিয়মিত অংশ নিতে দেখা গেছে। যেমন একটি গানে একটি ফরাসি শিশুর কণ্ঠ শোনা গেছে। সিরিয়া এবং ইরাকে পাঁচশোর বেশি ফরাসি শিশু এখনো সিরিয়া বা ইরাকে রয়ে গেছে, আইনি জটিলতার কারণে যাদের ফিরিয়ে আনাও অনেক কঠিন।
তবে ফরাসি আর কুর্দি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে শরণার্থী শিবিরগুলোয় যে শিশুরা রয়েছে, তাদের অন্তত ফিরিয়ে আনার দাবি করছেন ফ্রান্সে থাকা তাদের স্বজনরা।
একজন স্বজন বলছিলেন, 'কেন ফরাসি সরকার এসব ক্যাম্প থেকে ফরাসি শিশুদের ফিরিয়ে আনছে না। কুর্দি সরকার শিশু আর মায়েদের ফিরিয়ে নিতে বলছে, তাহলে সমস্যা কোথায়?
তবে এসব বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিরিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক নাদিম হুররি বলছেন, এ বিষয়ে ফ্রান্সের নীতি বেশ বিভ্রান্তিকর। কারণ অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া ফরাসি আইনে শিশুদের আলাদা করা যায় না। আবার ফলে প্রাপ্তবয়স্ক জিহাদিদের সিরিয়া বা ইরাকে বিচারের জন্য আটকে রাখায় এই শিশুদের আলাদা করেও দেশে ফেরত আনা যাচ্ছে না।
তিনি বলছেন, তাদের বিচারের জন্য ফরাসি সরকার কুর্দ আর উত্তর সিরিয়ার বাহিনীগুলোর ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যদি তাদের বিচার না করে? উত্তর সিরিয়ার বর্তমান আইন অনুযায়ী তাদের ৯৯ শতাংশ নারীরই বিচার সম্ভব না। আইনি এসব জটিলতায় কোন কারণ ছাড়াই অল্পবয়সীরা শিশুরা সেখানকার ক্যাম্পে আটকে থাকছে। কারণ তাদের সরকার এই শিশুদের ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী নয়।
এসব ক্যাম্পের অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা আর যৌন নির্যাতনের অভিযোগও উঠছে।
কিন্তু ফরাসি নাগরিক হলেও এসব শিশুর বাবা-মাকে শত্রু বলে মনে করে অনেক জিহাদি হামলার শিকার ফ্রান্স। আর তাই এসব শিশুকে ফ্রান্সে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটি স্পর্শকাতরতা আর আইনি জটিলতারও তৈরি করছে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা