তিস্তা পানিবণ্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে মতবিরোধ মেটাতে উদ্যোগী হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দিয়েছেন মমতা। তিস্তার জট ছাড়াতে চিঠি পাঠিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজকেও।
বুধবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে একটি সরকারি বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে তিস্তার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না সে প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন ‘তিস্তা পানি চুক্তি নিয়ে কোন কথা হয়নি। আগে যা আলোচনা হয়েছিল তাই।
তিনি বলেন ‘যেহেতু এই বিদেশ সফর, এখানে দুই দেশের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে তাই প্রধানমন্ত্রীকে আমি সফরের বিষয়টি চিটি মারফত জানিয়েছি। তাছাড়া এই সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আমাকে ফোন করেছিলেন। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়েও একটি চিঠি পাঠিয়েছি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুইটি রাজনৈতিক দলের (কেন্দ্রে বিজেপি দল এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস) মধ্যে নীতিগত পার্থক্য থাকবে কিন্তু যখন একটা সরকার কাজ করে সেখানে সরকারের অন্তর্গত কিছু কর্মসূচী থাকে সেই নিয়ম অনুযায়ী প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের তথ্য আদান প্রদান হয়ে থাকে। সেই হিসেবেই আমি আমার বাংলাদেশ সফরের খুঁটিনাটি নিয়ে চিঠি দিয়েছি’।
তবে সূত্র জানায়, বাংলাদেশে সঙ্গে তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি সইয়ে তার কোন আপত্তি নেই বলেই মোদিকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও তিস্তা চুক্তি করার আগে সতকর্তামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তিস্তার পানি নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা করে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী পানি দিতে চান মমতা। ঢাকায় যাতে তার ‘বাংলাদেশ-বান্ধব’ ভাবমূর্তিতে কোন আঁচড় না পড়ে, সেজন্যই এমন সচেতন উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০১১ সালে তারই আপত্তিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়। এরপর তিস্তা দিয়ে অনেক পানি বয়ে গেছে। আগের সেই অনড় মনোভাব থেকে মমতাও কিছু সরে এসেছেন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছেন মমতা। মোদিকে লেখা চিঠিতে মমতা সেই আশ্বাসের বিষয়টিও জানিয়েছেন বলে খবর।
মমতার মতে এই চুক্তি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে যে দাবি-দাওয়া রয়েছে তা আলোচনার মাধ্যমেই কাটিয়ে ফেলা সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গের দাবি-দাওয়া নিয়ে আগামী ৯ মার্চ দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মমতা। সেই বৈঠকে বাংলাদেশ সফর ও তিস্তু চুক্তি প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে।
মমতা চান পানির উৎস এবং পশ্চিমবঙ্গে তিস্তায় প্রবাহিত পানির মৌসুমভিত্তিক পরিমাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সবিস্তারে জেনে তবেই বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টনের অনুপাত ঠিক করা হোক। মোদির সঙ্গে বৈঠকে সেই বিষয়টিই জানাবেন মমতা। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে জটিলতার অবসানে গত ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে নিয়ে এক সদস্যের কমিঠি গঠন করেন মমতা। বাস্তবে কতটা পানি বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া যেতে পারে কিংবা কতটা পানি পশ্চিমবঙ্গ পাবে সেই সব বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতেই রাজ্য সরকারের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত রুদ্র কমিশনের প্রধান সমীক্ষাও শুরু করেছিলেন। রুদ্র কমিশনের সেই রিপোর্টও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা পড়েছে বলে খবর। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ মার্চ, ২০১৫/মাহবুব