মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর অবশেষে জীবন ফিরে পেল বাংলাদেশি এক শিশু। লিভার সমস্যায় আক্রান্ত ওই শিশুটির লিভার প্রতিস্থাপন করে এই অসাধ্য সাধন করেছেন দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
গত আগস্টের শেষের দিকে জন্ডিস ধরা পড়ে আমন জোয়াদ উদ্দিন (২ বছর ১১ মাস) নামে ওই বাংলাদেশি শিশুটির। এরপর থেকে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। ১১ সেপ্টেম্বর তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকার একটি হাসপাতালে। ‘হেপাটাইটিস এ’র কারণে তাঁর লিভারের তীব্র সমস্যা দেখা দেওয়ায় ওই হাসপাতালে তার চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও অবস্থার এতটাই অবনতি হতে থাকে যে শিশুটির কোয়াগুলোপ্যাথি (রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা) শুরু হয় এবং একটা সময়ে কোমায় চলে যায় আমন। স্বাভাবিকভাবেই জরুরি ভিত্তিতে তার লিভার প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয় ওই হাসপাতালের পক্ষ থেকে।
এরপরই দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং ২০ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকা থেকে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়। এরপর আমনের চিকিৎসার তত্ত্বাবধানের জন্য একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয় এবং তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অ্যাপোলো হাসপাতালের গ্রুপ মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. অনুপম সিবাল জানান ‘সেরিব্রাল এডিমা থেকে ওই কিশোরের মস্তিষ্ক (ব্রেন)-কে রক্ষা করতেই চিকিৎসা শুরু হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে আমনের মা তানজিম রাহা’র লিভার তাঁর ছেলের শরীরে প্রতিস্থাপন করাটাই একেবারে উপযুক্ত। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৩৬ ঘণ্টা পর আমনের লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়’।
চিকিৎসক আরও জানান, ‘আমনের লিভার প্রতিস্থাপন অত্যন্ত সফলতার সাথে করা হয়েছে এবং অস্ত্রোপচারের পাঁচ দিন পর থেকে তার এনসেফ্যালোপ্যাথি (মস্তিষ্ক সমস্যা) অনেকটা উন্নতি হয়েছে এবং কথা বলাও শুরু করেছে’।
যদিও এই লিভার প্রতিস্থাপন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ডা. সিবাল জানান, ‘গোটা বিষয়টি খুবই সঙ্কটপূর্ণ ছিল, শিশুটি ততক্ষণে হেপাটিক এনসেফ্যালোপ্যাথির তৃতীয় স্তরে চলে গিয়েছিল। এর অর্থ তার লিভারটি শরীর থেকে টক্সিক নির্গত করতে সমর্থ হচ্ছিল না, এতে তার মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল’।
অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র লিভার প্রতিস্থাপনকারী সার্জেন ডা. নীরব গোয়েল জানান, ‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর থেকে কোন শিশুর লিভার প্রতিস্থাপন করাটা অনেক বেশি প্রয়োজন। তার ওপর আমনের রক্তে জমাট বেঁধে যাওয়াটা আমাদের কাছে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল।
ডা. সিবাল জানান, আমনের শারীরিক অবস্থা এত দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছিল যে ওই পরিস্থিতিতে তাঁর জীবন বাঁচাতে লিভার প্রতিস্থাপন না করা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিল না। আমরা খুবই খুশি যে আমন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছিল এবং তিন সপ্তাহের মধ্যেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়’।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব