ব্রাজিলের 'পঞ্চ পাণ্ডব' নিয়ে মাতোয়ারা ফুটবলবিশ্ব। গ্যারিঞ্চা-ডিডি-ভাভা-পেলে-জাগালোদের দলটাকে এক বাক্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন সমালোচকরা। তাছাড়া ১৯৫৬ অলিম্পিকে সোনা জয়ী লেভ ইয়াছিনের সোভিয়েত ইউনিয়নের উপরও ভক্তদের আগ্রহ প্রবল। তারপরও ১৯৫৮ বিশ্বকাপ সুইডেনে শুরু হয়েছিল পুরোপুরি অন্ধকারে ঢাকা ভবিষ্যৎ সঙ্গে নিয়ে। চ্যাম্পিয়ন কে হবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারো জানা ছিল না। প্রমাণ মিলল ফরাসিরা মাঠে নামতেই। মরক্কোতে জন্ম নেওয়া ২৪ বছরের এক তরুণ ফরাসি ফুটবলারের দেখা পেল বিশ্ব। তিনি জাস্ট ফন্টেইন। এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল করার গৌরব নিয়ে আজও ফুটবলভক্তদের হৃদয়ে একটা আসন দখল করে আছেন ফন্টেইন।
বিশ্বকাপের মঞ্চে হাজির হওয়ার আগে ৫টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন জাস্ট ফন্টেইন। ফরাসি ক্লাব স্ট্যাড দা রেইমসে খেলতেন তখন। ফ্রান্সের ক্লাব ফুটবলে মোটামুটি নাম ডাক ছিল তাদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের রাজত্বই চলছিল ফরাসি ফুটবলে। বড় বড় তারকাদের ভিড়ে এক তরুণ ফুটবলারকে নিয়ে তেমন একটা মাতামাতি না থাকলেও ফন্টেইনকে অনেকেই একজন প্রতিশ্রুতিশীল তারকা হিসেবে দেখছিলেন। ফুটবল সমালোচকদের ধারণা ছিল-এবারে না হলেও ভবিষ্যতে এ ছেলে ভালো করবেই। কিন্তু কে জানতো হাঙ্গেরির স্যান্ডর ককসিসের রেকর্ডটা চার বছরের ব্যবধানেই ভেঙে দেওয়ার জন্য এই তরুণের আগমন! ১৯৫৪ বিশ্বকাপে স্যান্ডর ককসিস ১১ গোল করেছিলেন। তখনো পর্যন্ত ওটাই ছিল এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
ফন্টেইন মাঠে নামলেন ৮ জুন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। নরকোপিংয়ের ইদ্রোতস্পার্কেন মাঠে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। প্যারাগুয়েকে ৭-৩ গোলে পরাজিত করল ফ্রান্স। দ্বিতীয় ম্যাচে যুগোস্লাভিয়ার কাছে হারলেও ফন্টেইন দুই গোল করে ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে স্কটিশদের সঙ্গেও করলেন এক গোল। কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে পাত্তাই দিলেন না ফন্টেইন। ২ গোল করলেন তিনি। সেমিফাইনালে 'পঞ্চ পাণ্ডবে'র ব্রাজিলের মুখোমুখি হলো ফ্রান্স। ফন্টেইন একটা গোল করলেও ফ্রান্স হারল ৫-২ ব্যবধানে। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আরও চারটা গোল করলেন ফন্টেইন! বিশ্বকাপের ইতিহাসে দুটি করে হ্যাটট্রিক করার গৌরব আছে আর কেবল স্যান্ডর ককসিস (হাঙ্গেরি-১৯৫৪), গার্ড মুলার (জার্মানি-১৯৭০) ও গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার (আর্জেন্টিনা-১৯৯৪ ও ১৯৯৮)।
জাস্ট ফন্টেইন বিশ্বকাপের ইতিহাসে কিংবদন্তি। আধুনিক ফুটবলে ফন্টেইনের কাছাকাছি পৌঁছাও দুষ্কর। তবে বিশ্বকাপের এই কিংবদন্তি এখনো প্রাপ্য সম্মানটা পাননি। গোল্ডেন বুটের পুরস্কার সে সময় ছিলই না। ১৯৮২ সাল থেকে সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ফিফা অবশ্য জাস্ট ফন্টেইনের জন্য একটা গোল্ডেন বুট প্রস্তুত করার ঘোষণা দিয়েছে। ১১ জুন সাও পাওলো কংগ্রেসে ফিফা ৮০ বছরের ফন্টেইনকে 'গোল্ডেন বুট' দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অবশেষে স্বীকৃতিটা পাচ্ছেন বিশ্বকাপের কিংবদন্তি!
ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ করে ফন্টেইন কোচ হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ফ্রান্স জাতীয় দল, প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন, তুলুজ এবং মরক্কো জাতীয় দলে কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ফুটবল ছেড়ে নিরুপদ্রব জীবন কাটাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে জাতীয় দলের প্রশংসা কিংবা সমালোচনা করেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি।