বাংলাদেশ না মালয়েশিয়া? বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল ফাইনালে দুদেশ আজ মুখোমুখি হচ্ছে। বিকাল ৫টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচ নিয়ে দেশের ক্রীড়ামোদীদের উত্তেজনার শেষ নেই। ফুটবলে বাংলাদেশের ফাইনাল খেলাটা যেন অবিশ্বাসে পরিণত হয়েছিল। ২০০৯ সালে এসএ গেমসে সোনা জেতার পর বাংলাদেশ আর কোনো টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলতে পারেনি। ব্যর্থতা বা ভরাডুবিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য বলতে শুধু ক্রিকেটকে বুঝাতো। ফুটবলেও জেতা যায় এ যেন ভুলতে বসেছিলেন ক্রীড়ামোদীরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, চ্যালেঞ্জ কাপ, এশিয়ান গেমস বা অন্যান্য টুর্নামেন্টে ব্যর্থতা প্রাপ্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এতটা খারাপ অবস্থা যে অনেকে আক্ষেপ করে বলেছেন, বাংলাদেশের ফুটবলকে লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। আসলে অবস্থাও ছিল তাই। মান নেমে যাওয়াতে ফুটবল মাঠে দর্শক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচেও গ্যালারি থাকছে ফাঁকা। ফুটবলারদের ভিতরে জেদ ছিল এই সংকাটাপন্ন অবস্থা কাটাতেই হবে।
ফুটবলপ্রেমীদের বেদনা কমে যাবে যদি আজ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। ছয় দিন পরই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা উঠবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে। এ অবস্থায় পুরো দেশ ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু সবার চোখ আপাতত ফুটবলে। বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবলকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলেছে। টুর্নামেন্ট শুরু আগে টার্গেট সেমিফাইনাল থাকলেও মামুনুলরা এখন ট্রফি হাতে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। সিলেটে গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল। তাই ফাইনালকে ঘিরে কিছুটা হলেও ভয়ে আছেন ফুটবলপ্রেমীরা। তীরে এসে তরী যদি ডুবে যায় তাহলে সব শেষ। ম্যাচ হবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। কিন্তু উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। প্রশ্ন একটাই পারবেতো বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু কাপ জিতে ইতিহাস গড়তে? সত্যি কথা বলতে কি গত কয়েক বছর ধরে ফুটবলারদের নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে এদের দিয়ে কিছুই হবে না। জেদ থাকলে অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করা যায় তা এবার প্রমাণ রাখছেন মামুনুলরা। বাহরাইনকে টুর্নামেন্টের টপ ফেবারিট দল ধরা হয়েছিল। সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার কাছে হার যে নিছুক দুর্ঘটনা ছিল তা প্রমাণ দিয়েছে পরের ম্যাচে। শ্রীলঙ্কাও সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ খেলেছে। সাবেক ফুটবলাররা বলতে বাধ্য হচ্ছেন এত গতিময় ও ছন্দময় খেলা তারাও খেলেননি। মালয়েশিয়া যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে। ১৯৯৬ সালে প্রথম বঙ্গবন্ধু কাপে তারাই চ্যাম্পিয়ন দল। কিন্তু বাংলাদেশ যে গতিময় খেলা খেলছে তা যদি ধরে রাখতে পারে তাহলে ট্রফি ঘরে রাখাটা অসম্ভবের কিছু হবে না।
বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য আজকের ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিরোপা জিতলে আগের সেই উদ্দীপনা বা প্রাণ ফিরে আসবে। ফাইনালে ওঠার পর বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন খেলোয়াড়রা। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বললেন, ভালো খেলেই ফাইনালে উঠেছি। এখন আর পেছনে তাকানোর উপায় নেই। আমরা ট্রফি জিততেই মাঠে নামব। দেশকে শিরোপা উপহার দিতে ফাইনালে আমরা জান-প্রাণ দিয়ে লড়ব। সবাই সেরা খেলাটা খেলতে পারলে ইনশাল্লাহ আমরাই বিজয়ের নিশানা উড়াব। কোচ ক্রুইফ বলেন, ছেলেদের কাছে যা চাচ্ছি তাই পাচ্ছি। সেমিফাইনালে ওদের পারফরম্যান্সে সত্যিই আমি মুগ্ধ। আশা রাখি ফাইনালেও ছেলেরা ভালো খেলবে এবং দেশকে শিরোপা উপহার দেবে। স্ট্রাইকার এমিলি প্রসঙ্গে কোচ বলেন, ফুটবলে গোলের সুযোগ নষ্ট করা মানে এই নয় যে কোনো খেলোয়াড়কে হুট করে বসিয়ে দেওয়া। ফাইনাল মানেই বাড়তি টেনশন। তাই রবিবারের ম্যাচে এমিলির মতো খেলোয়াড়ের প্রয়োজন রয়েছে। আমার বিশ্বাস ফাইনালে ও দর্শকদের মন ভরাবে। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার কোচ বলেন, বঙ্গবন্ধু কাপে আমাদের অতীত রেকর্ড ভালো। প্রথম আসরে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কিন্তু ফাইনালে আমরা বাংলাদেশকে কোনোভাবেই হালকা চোখে দেখছি না। প্রথম ম্যাচ হারলেও ওরা ডে বাই ডে খেলার ইমপ্রুফ করেছে। সুতরাং শিরোপা লড়াইয়ে তারা কোনোভাবেই ছেড়ে কথা বলবে না। অধিনায়ক নাইম বলেন, আমরা তিন ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছি। আশা রাখি শিরোপাও জিতব। উল্লেখ্য ফুটবল ইতিহাসে বাংলাদেশ প্রথম শিরোপা জিতে ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট কাপে। ১৯৯৫ সালে দেশের বাইরে মিয়ানমারে চার জাতি টুর্নামেন্ট, ১৯৯৯ সালে নেপালে সাফ গেমস, ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০০৯ সালে এসএ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।