মালয়েশিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবে প্রিয় বাংলাদেশ- এমন স্বপ্ন বুকে নিয়ে দুপুর থেকেই হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীর ঠিকানা হয়ে উঠে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ফুটবলপ্রেমীরা যে উৎসাহ, উচ্ছ্বাস, উৎসবের আমেজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন স্টেডিয়ামে, দিন শেষে ফিরেছেন একরাশ হতাশা ও কান্নার নোনা জলে সিক্ত হয়ে। গোলের খেলা ফুটবল- এমন সমীকরণের ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হেরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা অধরা রয়ে যায় বাংলাদেশের। অতিরিক্ত সময়ে ফাইজাতের গোলে (৩-২) জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় মালয়েশিয়া।
খেলা শুরুর আগে খেলোয়াড়দের তালিকায় নাম ছিল শ্রীলঙ্কা ম্যাচের জয়ের নায়ক হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসের। কিন্তু মাঠে নামার পর দেখা গেল হেমন্ত নেই। তার জায়গায় প্রথমবারের মতো একাদশে সুযোগ পান মোনায়েম খান রাজু। অথচ ম্যাচ শুরুর আগে গা গরমও করেন হেমন্ত। কেন খেলা হলোনা হেমন্তের, এটা জানা গেল ম্যাচ শেষে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পরে দর্শক হয়েই খেলা দেখেছেন হেমন্ত। দলের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে রেখে হাজার হাজার দর্শকের উন্মাতাল সমর্থনে খেলতে নামেন উজ্জীবিত, উদ্দীপ্ত মামুনুলরা। শুরুর পর ষষ্ঠ মিনিটে ফের হোচট খায় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের সঙ্গে আঘাত পেয়ে মাঠের বাইরে চলে আসেন মিডফিল্ডার জাহিদ। দুই তারকার অনুপস্থিতিতে ছন্নছাড়া মধ্যমাঠ নিয়ে খেলতে থাকেন মামুনুলরা। ফলে মালয়েশিয়ার আক্রমণে সামাল দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। মধ্যমাঠের আধিপত্য হারিয়ে প্রতিপক্ষের গতির সঙ্গে পেরে না উঠে মাত্র ৯ মিনিটের ব্যবধানে দুই দুটি গোল খেয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। ৩১ মিনিটে প্রায় ৩০ মিটার দূর থেকে বাঁ পায়ে অসাধারণ এক ফ্রি কিকে মালয়েশিয়ান অধিনায়ক নাজিরুল নাঈম গোল করে এগিয়ে নেন দলকে (১-০)। ৪০ মিনিটে স্বাগতিক রক্ষণভাগের ভুলে দ্বিতীয় গোল পায় সফরকারীরা। মধ্যমাঠ থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেন শিয়াজওয়ান। শিয়াজওয়ানের হেড থেকে পাওয়া বলে টোকা দেন আজিরুল। ফাঁকায় দাঁড়ানো কুমারন বল ধরে বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পরেন ডি বক্সে। এরপর আগুয়ান গোলরক্ষক শহিদুল আলমকে বোকা বানিয়ে ডান পায়ে আড়াআড়ি শটে গোলসংখ্যা দ্বিগুণ করেন (২-০)। দুই গোলের পর স্টেডিয়ামের হাজারো দর্শকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে!
দ্বিতীয়ার্ধে ১৬ কোটি ফুটবলপ্রেমী ভিন্ন চেহারার বাংলাদেশকে দেখে। ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে অলআউট ফুটবল খেলতে থাকেন মামুনুলরা। মরণপণ বাজি রেখে খেলায় ফিরে বাংলাদেশ। ৪৮ মিনিটে অসাধারণ এক গোল করেন দেশসেরা স্ট্রাইকার জাহিদ হোসেন এমিলি। মালয়েশিয়ার রক্ষণভাগে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া রায়হানের থ্রো থেকে প্রথম গোল পান মামুনুলরা। ডান প্রান্ত থেকে রায়হানের লম্বা থ্রোতে সেমি ফাইনালের জয়ের নায়ক নাসির উদ্দীন হেড করেন। বল জালে ঢোকার ঠিক আগ মুহূর্তে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মোহাম্মদ ফারহান। কিন্তু সামনে দাঁড়ানো এমিলি বাঁ পায়ের টোকায় গোল করে মাতিয়ে দেন মাঠ (১-২)। এমিলির গোলের পর পুরো দল যেন নতুন উদ্দীপনা খুঁজে পায়। কখনো রাইট উইং, কখনো লেফট উইং, কখনো আবার মধ্যমাঠ থেকে পাসিং ফুটবল খেলে বিধ্বস্ত করে ফেলে মালয়েশিয়ার রক্ষণভাগকে। অলআউট ফুটবল খেলতে খেলতে ৫৩ মিনিটে কর্নার আদায় করে স্বাগতিকরা। অধিনায়ক মামুনুলের বাঁ পায়ের সোয়ার্ভিং কর্নার প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে দ্বিতীয় বারে চলে আসে। ঠিক তখনই ইয়াসিন খান হেডে সমতা আনেন (২-২)। মাত্র ৫ মিনিটের ব্যবধানে সমতায় ফিরে শতগুণ আক্রমণ বাড়িয়ে দেয় ক্রুইফবাহিনী। মামুনুল-এমিলি-জামাল- সোহেল রানাদের সাঁড়াশি আক্রমণ ঠেকাতে পাগলপ্রায় হয়ে উঠে মালয়েশিয়া।
দর্শকেরা যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের। ঠিক তখনই শূল হয়ে বিঁধে মুহাম্মাদ ফাইজাতের হেড। বাঁ প্রান্ত থেকে উড়ে আসা কর্নারে হেডে অসাধারণ গোল করেন ফাইজাত (৩-২)। ওই গোলের পর আর খেলায় ফেরা হয়নি বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ফেবারিট হয়েও চোখের জলে ভিজে মাঠ ছাড়েন মামুনুলরা।