৪১ দিনের দীর্ঘ ছুটি শেষে রবিবার শুরু হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কর্মদিবসেই আবারো আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা বিতর্কিত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন।
রবিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অবিলম্বে মামলা তুলে না নিলে কঠোর আন্দোলনে নামার হুশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ‘প্রতিবাদের নাম জাহাঙ্গীরনগর’ শীর্ষক ব্যানারে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান ভবনের সামনে থেকে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চে’র ব্যানারে মৌন মিছিল পালনের ঘোষণা দেন জাবি সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌহিদ হাসান শুভ্র।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সহ-সভাপতি অলিউর রহমান সানের সঞ্চালনায় এ সময় তিনি বলেন, “আজ থেকে আবার নতুন করে আমাদের আন্দোলন শুরু হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন মামলা প্রত্যাহার না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে।”
তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীদের উপর যে পুলিশি হামলা এবং মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে উপাচার্য তার দায় এড়াতে পারে না। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা যেসব দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম তা এখনো পুরোপুরি পূরণ করা হয়নি। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হয় নি। দায়সারাভাবে যে স্পীড ব্রেকার নির্মাণ করা হয়েছিল তা অনেক জায়গায় উঠে গেছে।”
মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে জাবি ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট এবং সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সি এন্ড বি এলাকায় বাস চাপায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান রানা এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্র আরাফাত হোসেন।
প্রতিবাদে ২৬ এবং ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ২৭ মে বিকালে পুলিশের লাঠিপেটায় আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছাড়তে বাধ্য হয়। পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ আহত হয় ১০ শিক্ষার্থী।
পরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়। রাতে জরুরী সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে কর্তৃপক্ষ ৫৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সব শিক্ষার্থীকে ২৮ মে রোববার সকাল দশটার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন।
ওই রাতেই আশুলিয়া থানা পুলিশ উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে থাকা ১০ ছাত্রীসহ আন্দোলনকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন বিকালে ওই শিক্ষার্থীরা জামিনে মুক্তি পান।
এ ঘটনার সাত দিন পরে গত ৩রা জুন শনিবার পুনরায় এক জরুরী সিন্ডিকেট সভায় আবাসিক হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিডি প্রতিদিন/ ০৯ জুলাই, ২০১৭/ ই- জাহান