কুমিল্লা ব্শ্বিবিদ্যালয়ের(কুবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কাজী নজরুল হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যাকান্ডের এক বছর পূর্ণ হল। একটি বছর গত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আজও নেওয়া হয়নি কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসও গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ও নিহত সাইফুল্লাহর পরিবারে ক্ষোভ বিরাজ করছে ।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগষ্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের পর আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সংঘর্ষ হয়। এতে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পওে (হত্যাকান্ডের ২ মাস ২৬ দিন পর) গত ২৬ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। টেন্ডারবাজি, ক্যাম্পাসে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অনেক দিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাইফুল্লাহ হত্যার বিচারে টালবাহানা করছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ‘ছাত্র হত্যার মত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছে। এতে অপরাধের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।’
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে খালিদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা বেগম এখন পাগল প্রায়। সন্তান হত্যার বিচার না হওয়ায় খালিদ সাইফুল্লাহর মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে আমার ছেলের লাশ উপহার দিয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পায়ে পায়ে ঘুরেও কোন বিচার পাইনি।’
উক্ত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও তৎকালীন প্রক্টর মো. আইনুল হক বলেন, ‘ঘটনার পূর্বাপর কারণ তদন্ত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমরা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শৃঙ্খলা বোর্ড গঠন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেন দোষীদের শাস্তি দিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আলী আশরাফ বলেন, ‘ তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার কাছে পর্যালোচনার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, তিনি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী সিন্ডিকেটে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে, প্রশাসন এ বিষয়ে কাজ করছে।’
উল্লেখ্য, হত্যার ঘটনায় পহেলা আগস্ট ১০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মামলাটির চার্জশীটও জমা দেয় কুমিল্লা পুলিশের গোয়েন্দা(ডিবি) শাখা। হত্যাকান্ডের ৫দিন পর ৬ আগস্ট মামলার প্রধান আসামি ও মার্কেটিং ৪র্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী বিপ্লব চন্দ্র দাসকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিপ্লব হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সে এখন জামিনে মুক্ত।
বিডিপ্রতিদিন/ ৩১ জুলাই, ২০১৭/ ই জাহান