দরিদ্র মানুষের জন্য পাঠানো ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে-ই এর সঙ্গে জড়িত সে যে দলেরই হোক তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাংলানিউজের।
এরপরও ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চলছে নয়ছয়। কারও কারও বিরুদ্ধে উঠেছে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও। চট্টগ্রামের পটিয়ায় ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করায় নুর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করেছেন হুইপ অনুসারী হিসেবে পরিচিত জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের এয়াকুবদন্ডী ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন সবুজ। এ ব্যাপারে গত ১১ এপ্রিল ইউপি সদস্য সবুজসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন সবুজ এলাকায় সম্প্রতি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে এলাকার বেশকিছু দরিদ্র মানুষকে বাদ দেন। এর প্রতিবাদ করলে নুর হোসেনকে ডেকে নিয়ে সবুজ ৮-১০ জন লোক দিয়ে মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
জানা গেছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপির ত্রাণ সহায়তা টিম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে। তবে এসব ত্রাণ অনেক দরিদ্র ও দিনমজুররা পাচ্ছেন না। টিমের কিছু সদস্য নিজেদের পছন্দমতো লোককে ত্রাণের কিছু প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ফটোসেশন করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠাচ্ছেন।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছোট ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবও প্রতিদিন হুইপের পক্ষে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চাল, ডাল, আলু, সাবান, মাস্ক ও হেক্সিসল বিতরণ করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন। এছাড়া পটিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী নিজ অর্থায়নে উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও পটিয়া পৌরসভায় ইতোমধ্যে ৬ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে ভোটার আইডি কার্ড না থাকলেও অসহায়, গরিব ও দুস্থ ব্যক্তিদের ত্রাণ দিতে সরকার নির্দেশ দিলেও তা পটিয়ায় মানা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায়।
চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় এই নির্দেশনা মেনে ত্রাণ বিতরণ করবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট দুর্যোগে সিটি করপোরেশন, উপজেলা বা পৌরসভায় বসবাসকারী নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন: বস্তিবাসী, বেকার শ্রমিক, চা শ্রমিক, রেস্তোরাঁ শ্রমিক, মোটরযান শ্রমিক, নির্মাণ ও কৃষি শ্রমিক, চা দোকানদার, দিনমজুর, ভবঘুরে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বয়স্ক ব্যক্তি, স্বামী পরিত্যক্তা বা বিধবা নারী, রিকশা ও ভ্যানচালক, ভিক্ষুক, বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায় এবং পথশিশুদের মধ্যে প্রয়োজন ‘অনুযায়ী ত্রাণ’ সামগ্রী বিতরণ করতে হবে। ভোটার আইডি কার্ড না থাকার অজুহাতে কোনো অসহায়, ভাসমান গরীব ও দুস্থ ব্যক্তিদের ত্রাণ বিতরণ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
হুইপ সামশুল হক চৌধুরী তার ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘পটিয়া পৌরবাসী, মধ্যবিত্ত, সাধারণ শ্রেণির পরিবারের কথা চিন্তা করে যাদের পৌর এলাকার ভোটার আইডি কার্ড রয়েছে তাদের জন্য বিশেষ ওএম এস চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সাপ্তাহিক তিনদিন রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার। সকাল থেকে ২টা পর্যন্ত। ১, ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের যারা আছেন তারা উপজেলার সামনে থেকে সংগ্রহ করবেন। ২, ৩, ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ড পৌরসভা অফিসের সামনে থেকে সংগ্রহ করবেন।
প্রতি সপ্তাহে এক পরিবারকে ৫ কেজি চাউল ৫০ টাকায় দেয়া হবে। যার যার স্থান থেকে প্রতি সপ্তাহে তিন দিনে ২০০ পরিবার করে ৬০০ পরিবারকে তিন হাজার কেজি করে দুই স্থান থকে ১২০০ পরিবারকে ৬০০০ কেজি দেওয়া হবে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’।
এর আগে গত বছরের ১৪ জুন পটিয়ার ছনহরায় ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। চাল বিতরণের সময় একটি পরিবারের একাধিক সদস্য এবং আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চাল নিতে দেখা যায়।
বিষয়টি নজরে এলে ভিজিএফ চাল বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নামের তালিকা সমন্বয় করার উদ্যোগ না নেওয়ায় ওইসময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন স্থানীয়রা।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত