করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বিভিন্ন সড়কের গণ-পরিবহনে চাকরি করতেন শত শত চালক-হেলপার। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় তারাও আজ চাকরিবিহীন অসহায়। অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন তারা।
দেশের এ অবস্থায় বাস, ট্রাক, মিনিবাসসহ নানাবিধ লোকাল-আন্তঃনগর গাড়ি চলাচল নেই। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে সেই চালক-হেলপারদের সংসারে অর্থাভাবে হাহাকার চলছে। চলতি রমজান মাসেই পরিবারের জন্য ইফতার সামগ্রী বা প্রতিদিনের খাবার যোগাড় করেও হিমশিম খাচ্ছেন এসব খেটে খাওয়া মানুষ।
অন্যদিকে পরিবহন মালিকরা কিছু কিছু চালক-হেলপারের অসহায়ত্ব দেখে সমিতি ছাড়াও বিভিন্নভাবে এবং ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করছেন এবং অব্যাহত রেখেছেন। তবুও চালক-হেলপারদের পরিবারসহ চলতে অনেক কষ্ট হয়ে পড়ছে।
চট্টগ্রাম নগরীর বিবিরহাট এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় মালেক নামে এক বাসচালক বসবাস করেন দীর্ঘ বছর ধরেই। তিনি ছোট টিন সেটের একটি ঘরেই দুই মেয়ে এক ছেলে সন্তান ও স্ত্রীসহ পরিবার নিয়েই বসবাস করছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ায় অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে জীবন-যাপন করছি। নতুন করে কিছু করবো, সেটাও পাচ্ছি না। আমার স্ত্রী বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করতো, সেখানেও যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ অনেকেই করোনার কারণে ঘরের কাজে, কাজের লোক রাখছেন না। ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে। তাদেরও খাবার দরকার। কোনো রকমে কষ্টেই দিন পার করছি।
একই কথা বললেন চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে চলাচলরত বাসের ২৪ বছরের হেলপার মামুন। তিনি বলেন, ঘরে আমার মা-বোনসহ একটি ভাড়া বাসায় থাকি। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে ভ্যানে করে সবজি বিক্রয় করছি। মা-বোনদের খাবার যোগারের জন্য কিছু একটা তো করতেই হবে। পরিবারের জন্য তিন বেলা খাবার যোগার করা অনেক কষ্টের। তবে গাড়ি চলাচল শুরু হলে আবারও হয়তো সেখানে চলে যাবেন বলে জানান তিনি। এমন চিত্র চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা একাধিক চালক-হেলপারের।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মনজুর আলম মনজু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে মানবিক দৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে। এতে আমাদের গাড়ির চালক-হেলপাররাও এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে। মালিকরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে শ্রমিকদের সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এবং ব্যক্তিগতভাবেও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছেন। এতে করোনায় আজ সবকিছু অসহায়ত্ব হয়ে পড়ছে। মনবল শক্ত রেখেই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের একটি মৃত্যু ফান্ড রয়েছে। এ ফান্ডে মালিকদেরও সহযোগিতা রয়েছে। এ ফান্ডটি থেকে শ্রমিক নেতারা এ দুঃসময়ে শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করলে শ্রমিক পরিবারের কিছুটা হলেও কষ্ট কমে আসবে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন কর্মজীবী মানুষও। বিশেষ করে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় কাজ হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিক বা চালক-হেলপাররা। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সব মিলিয়ে তাদের দিনগুলো চলছে অনেক কষ্টে এবং জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
গত ২৬ মার্চ থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফার্মেসি আর নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব কিছু বন্ধ রয়েছে। মানুষকে ঘরে রাখতে চলছে নানা কার্যক্রম। আর এতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তাছাড়া চট্টগ্রামের নগরীর বিভিন্ন সড়ক, চট্টগ্রাম-ঢাকা,চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন সড়কে চলাচলরত গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম