চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেই ২৩০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুসহ বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। রবিবার তিনি এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন।
ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও প্রতিরোধ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির গত ২৫ মার্চের সভায় চট্টগ্রামের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবাপ্রদানে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু এসব বেসরকারি ক্লিনিক করোনা রোগী ভর্তি রাখতে চূড়ান্ত রকম অনীহা প্রকাশ করে। ফলে আইসিইউ সেবা না পেয়ে তিনজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। ইতোমধ্যে বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকগণ চারবছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘হলি ক্রিসেন্ট’ হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষ সংস্কার, একটি কক্ষে কয়েকটি ক্লিনিকের ব্যবহৃত আটটি ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ শয্যা এবং ২৫টি পুরাতন সাধারণ শয্যা বসিয়ে পরিচালনার চেষ্ট চলছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চমেক হাসপাতাল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বিচ্ছিন্ন জায়গায় ৩৫ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনায় অর্থ, যন্ত্রপাতি ও জনবল প্রয়োজন। তাই পরিত্যক্ত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা না করে সরকারি প্রতিষ্ঠানেই করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বে।’
প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘চমেক হাসপাতালে বর্তমানে ৩০ শয্যায় ‘করোনা আইসোলেশন’ ইউনিট চালু আছে। এর পাশেই প্রস্তুত করা হয়েছে আরো ১০০ শয্যার ওয়ার্ড। এখানেই প্রস্তুত করা হচ্ছে পাঁচ শয্যার আইসিইউ। তাছাড়া আরো ১০০ শয্যা প্রস্তুতের সক্ষমতা আছে। তাই চমেক হাসপাতালকে কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের হাসপাতাল বিবেচনা করে আইসিইউসহ ২৩০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করলে এখানেই বহুমাত্রিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে ৩৯ তম (বিশেষ) বিসিএস এ সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক এবং পদায়নের জন্য অপেক্ষমান প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স নিয়োগ করলে এ ইউনিট সহজে চালু করা যাবে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডিতে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এ মুহুর্তে ১০ শয্যার আইসিইউসহ ১০০ শয্যায় রোগীর চিকিৎসা চলছে। আরো আটটি ভেন্টিলেটরসহ ১০ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের কাজ চলছে। তাই এ হাসপাতালে আরো ৫০ শয্যা করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত করা যেতে পারে। বর্তমান জনবল দিয়েই এ কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। তাছাড়া, ১০০ শয্যার বিআইটিআইডিতে বর্তমানে ৩০ শয্যায় করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে। বাকি ৭০ শয্যাও করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত করা যেতে পারে। এ জন্য অতিরিক্ত জনবল ও অর্থের প্রয়োজন হবে না। সরকারি এসব উদ্যোগের পরও যদি সরকারি উদ্যোগে বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে নূন্যতম ১৫০-২৫০ শয্যার চালু কোন বেসরকারি হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজকে বিবেচনা করা যায়। এর মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল (ইউএসটিসি), সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পার্কভিউ হসপিটাল, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মা ও শিশুহাসপাতাল (নতুন ভবন)।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার/রেজা মুজাম্মেল