মহামারি সংক্রমণ করোনা ভাইরাসের কারণে চট্টগ্রামে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলসহ কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সরকারের এসব নির্দেশ মানছেন না সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রামে গামের্ন্টের বেতনের দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন এবং কর্মহীন রিক্সা চালকদের বিক্ষোভেও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। এসব ঝুঁকি এড়ানো কোন ধরণের জিনিসপত্র ছাড়াই দূরত্ববিহীন আন্দোলন, ফিশারীঘাট মাছের বাজার, খোলা মাঠেও বিভিন্ন কাঁচা বাজারে, রাস্তায়, আড্ডায়, গাড়িতে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের।
তবে দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষে চট্টগ্রামের উপজেলাকে লকডাউন এবং নগরীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলায় কম/বেশী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নগরীর পাশাপাশি উপজেলাগুলোতে সেনাবাহিনী ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন সাধারণ মানুষের দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানাবিধ সরকারি দিক-নির্দেশনামুল প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য চট্টগ্রামে প্রশাসনের সকল স্তরের সমন্বয়ে টহল, ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানাসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল কাজ করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, করোনাপরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউই। নানাভাবে সাধারণ মানুষ এখনও ঝুকিঁ নিয়েই বের হচ্ছেন। বেতনের দাবিতে করছেন ঝুঁকির মধ্যে আন্দোলনও।
সোমবার করোনা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন একটি কারখানার শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে আটটা থেকে কারখানার সামনে শত শত শ্রমিকরে উপস্থিতিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।
এসময় আন্দোলনরত কয়েকজন শ্রমিক বলেন, পেটের খাবারের টাকা নেই, সেখানে করোনা দিয়ে কি করবো। গত দুই মাস ধরে বেতন ভাতা দেয় নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঈদের আগে এক মাসের বেতন পরিশোধ করার কথা থাকলেও বোনাস পরিশোধ না করার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। তাই বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে সকাল থেকে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
তবে কারখানার ম্যানেজার বলেন, বেতন ভাতা নিয়ে শ্রমিকরা যে আন্দোলন করছিল তা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। গত মার্চ মাসের বেতন আগামি ১৭ মে এবং এপ্রিল মাসের বেতন ২০ মে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পরিশোধ করা হবে। এছাড়া বোনাসের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা চলছে। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। এর আগে শনিবার দেড় মাস ধরেই কর্মহীন চট্টগ্রামের অটোরিকশার চালক সড়কে বিক্ষোভ করেছেন। এসময় তারা মানবেতর জীবনযাপনের কথা তুলে ধরে অটোরিকশা চালানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। নগরীর এ কে খান মোড়ে অর্ধশতাধিক অটোরিকশা চালক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই বলছেন, গত ২৫ মার্চের পর থেকে তারা আর অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারেননি। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় অধিকাংশই শহর ছেড়ে নিজেদের বাড়িতেও যেতে পারেননি। উপার্জন না থাকলেও তাদের ঘরভাড়া দিতে হচ্ছে। পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে তাদের দিন কাটছে। ত্রাণ না পাবারও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনায় যারা পেটের তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে সড়কে নামছে তাদেরকে ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হচ্ছে। কেউ আদেশ অমান্য করে রাস্তায় ঘুরাফেরা করলে জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নিজেদের ও এলাকার স্বার্থে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমীন বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সব কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। কেউ এসব নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানাও করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার