'ফাউন্ডেশন' সিরিজ লেখার সময় স্যার আইজ্যাক আসিমভ কি ভেবেছিলেন তার এই লেখা একদিন তাকে সাইন্স ফিকশনের গুরু বানিয়ে দেবে। আর্থার সি. ক্লার্কের কি ধারণা ছিল বিবিসি প্রতিযোগিতার জন্য 'দ্য সেন্টিনেল' নামক লেখাটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। তিনি বিশ্বে পরিচিত হবেন 'ভবিষ্যতের স্বপ্নদ্রষ্টা' হিসেবে। 'স্টারশিপ ট্রুপারস' লিখে বাজিমাৎ করেন রবার্ট হেইনলেন। তার এই মিলিটারি সাইন্স ফিকশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই কিনা পরে ফিল্ম ও গেমস্ নির্মিত হয়। 'বিগ থ্রি'র এই তিন লেখক ছাড়া যেমন কল্পনাও করা যায় না সাইন্স ফিকশন, তেমনি বর্তমান পরিস্থিতিতে তামিম-সাকিব ছাড়া কি বাংলাদেশ দলকে ভাবা যায়? আর যদি ম্যাচটি হয় ভারতের বিরুদ্ধে!
সাইন্স ফিকশনে 'বিগ থ্রি'র যতটা প্রভাব, বাংলাদেশ দলে দুই বন্ধুর প্রভাব তত বেশি নয়! কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে সাকিব-তামিমের রেকর্ড কিন্তু উজ্জ্বল। ভারতের বিরুদ্ধে শেষ দুই জয়েই বড় ভূমিকা ছিল দুই বন্ধুর। কিন্তু আজ দুই তারকাই অনুপস্থিত। কাঁধের ইনজুরিতে খেলতে পারছেন না তামিম। অশোভন আচরণের জন্য নিষেধাজ্ঞার কবলে সাকিব। তবে মাঠে না থাকা দুই তারকাকেই মিস করবেন দর্শকরা।
ক্রিকেটামোদীরা আজ মিস করবেন আরেকজনকে, তিনি মাস্টার ব্লাস্টার ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঢাকায় সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর। সেটি ছিল শচীনের শততম সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের শেষ সেঞ্চুরিও বটে। তাই আজ এই গ্রেট ক্রিকেটারকে মিস করবেন তার ভক্তরা।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দেয় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। অসাধারণ বোলিং করে সেই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছিলেন নড়াইল এঙ্প্রেস মাশরাফি বিন মুর্তাজা। কিন্তু দুই বন্ধু সাকিব-তামিমের হাফ সেঞ্চুরি জয়টিকে সহজ করে দিয়েছিল। ভারতের বিরুদ্ধে খেলা সব শেষ ম্যাচটির কথাই ভাবুন। গত এশিয়া কাপে শচীনের সেঞ্চুরিতে ভারত যখন ২৮৯ রান করেছিল, তখন কি কেউ ভেবেছিল এই ম্যাচও জিততে পারে বাংলাদেশ? কিন্তু জিতেছিল তামিমের ৭০ রানের সময়োপযোগী একই ইনিংসে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওই ম্যাচেও ৪৯ রান করেছিলেন সাকিব।
২০১১ সালে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও যখন ভারত ৩৭০ রানের পাহাড়সম স্কোর করে, তার জবাবটা শক্ত হাতেই দিয়েছিলেন তামিম। খেলেছিলেন ৭০ রানের দারুণ এক ইনিংস।
গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ যে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেছিল, সেখানেও বড় অবদান দুই বন্ধুর। তামিম তো টানা চার ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। আর সাকিব ব্যাটে-বলে চমক দেখিয়ে 'ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট' হয়েছিলেন। কিন্তু এবার ভারত এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দুটিতে দেখা যাবে না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। তামিম তো পুরো সিরিজেই নেই। দুই বন্ধুর অভাবটা বেশ ভোগাবে বাংলাদেশকে। ভারতের বিরুদ্ধে আজকের বাংলাদেশ দলকে তাই 'বিগ থ্রি' বিহীন সাইন্স ফিকশনের সঙ্গে তুলনা করাই যায়! তবে আশার কথা, 'বিগ থ্রি'কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তরুণ লেখকরা যেমন সাইন্স ফিকশনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি তামিম-সাকিবের পারফরম্যান্সকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আজ বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিক নতুন কোনো তারকা। এমন প্রত্যাশাই দেশবাসীর।