বিপিএলে দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিংয়ের জড়িত থাকায় মোহাম্মদ আশরাফুলসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আইসিসির তদন্ত কমিটি আকসু। আকসুর ওই ঘোষণায় হৈ চৈ পড়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এর আগে একসঙ্গে এত সংখ্যক ক্রিকেটার ও সংগঠকের বিপক্ষে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ক্রিকেট বিশ্বে উঠেনি। বাংলাদেশতো দূরের কথা! অবশ্য পরবর্তীতে সেই ৯ জনের সঙ্গে যোগ হয় নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ল্যু ভিনসেন্টের নাম। অভিযুক্তদের অভিযোগ প্রমাণের জন্য আকসুর নিয়ম অনুসরণ করেন একটি ট্রাইব্যুনাল কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ট্রাইব্যুনাল কমিটি প্রায় তিন মাস তদন্ত করে গত পরশু রায় দেয়। যাতে অভিযুক্ত ১০ ক্রিকেটারের ৬ জনকে নির্দোষ বলা হয়। ট্রাইব্যুনালের এই রায়ের ঘোষণায় জন্ম দিয়েছে বিস্ময়ের। আর হতাশা ব্যক্ত করেছে আইসিসি ও বিসিবি। অবশ্য আগামী দুই সপ্তাহ পর যে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে, তার অপেক্ষাতেই রয়েছে বিসিবি। সেই রায়ে সন্তুষ্ট না হলে নতুন করে তদন্ত করতে পারে আইসিসি।
বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে দুষ্ট হয়েছেন আশরাফুল, মোশাররফ হোসেন রুবেল, মাহাবুবুল আলম রবিন, মো. রফিক, সেলিম চৌধুরী, শিহাব চৌধুরী, গৌরব রাওয়াত, ইংলিশ ক্রিকেটার ড্যারেন স্টিভেন্স, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার কৌশল্য লোকুরেচ্চি ও ব্ল্যাক ক্যাপস ক্রিকেটার ভিনসেন্ট। এদের বিপক্ষে আনীত অভিযোগ প্রমাণের জন্য গত ১৪ অক্টোবর সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রশিদকে প্রধান করে ১১ সদস্যের ডিসিপ্লিন কমিটি গঠন করে বিসিবি। ১০ নভেম্বর বিচারপতি খাদেমুল ইসলামকে প্রধান করে গঠন করা হয় তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল কমিটি। কমিটির বাকি দুই সদস্য আজমালুল হোসেন কিউসি এবং সাবেক ক্রিকেটার শাকিল কাশেম। গত পরশু যে চারজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আশরাফুলের সঙ্গে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন লোকুরেচ্চি ও ভিনসেন্ট। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কর্ণধার শিহাব চৌধুরীর বিপক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। অন্যরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। রায় সম্পর্কে বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, 'আমরা কখনোই ট্রাইব্যুনালের কাজে হস্তক্ষেপ করিনি। স্বাধীনভাবে কাজ করেছে কমিটি। নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন যারা, তাদের বিপক্ষে অভিযোগ ছিল। এ বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। এখনতো শুধু রায় দিয়েছে। আমরা অপেক্ষায় আছি চূড়ান্ত রায়ের।' চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ লাগবে। তখনই অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের সাজা ঘোষণা করা হতে পারে। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের পক্ষে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা অনেক আগেই স্বীকার করেছেন আশরাফুল। এখন তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন সাজা ঘোষণার। তবে সাজা কমানোর জন্য আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান, 'শাস্তি কমানোর জন্য আমি আবেদন করব। তবে সাজা কবে ঘোষণা করা হবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। আমি মনে করি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হবে। যদি কোনো কারণে চূড়ান্ত রায় আইসিসির মনোঃপুত না হয়, তাহলে তারা হয়তো পরবর্তীতে আবারও তদন্ত করতে পারে।' বিসিবি নাখোশ। কিন্তু নির্দোষ প্রমাণিত দুই ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেল ও রবিন। এখন তারা অপেক্ষা করছেন আবার মূল ধারার ক্রিকেটে ফেরার। এ প্রসঙ্গে মোশাররফ রুবলে বলেন, 'আমরা কখনই ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। সেটা রায়েই প্রমাণিত হয়েছে। এখন আমি মূল ধারার ক্রিকেটে ফিরতে চাই। খেলতে চাই ক্রিকেট। বিসিবি কি সিদ্ধান্ত নেয়, তার অপেক্ষায় রয়েছি।' ক্রিকেটে ফিরতে চান জাতীয় দলের সাবেক পেসার রবিনও, 'কোনো দোষ করিনি, সেটা রায়ই বলছে। এখন আমি নির্দোষ। আমি আবারও ক্রিকেট খেলতে চাই।' অবশ্য নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় অটোমেটিক্যালি্ল তাদের উপর থেকে ক্রিকেট খেলার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে।