রোনালদো, রোনালদিনহো, রিভালদো -ব্রাজিলের তিন সুপারস্টার। তিন ফুটবলারের একসঙ্গে আগমনকে ব্রাজিলভক্তরা নাম দিয়েছিল 'থ্রি-আর যুগ'। রোনালদো স্ট্রাইকার। রোনালদিনহো এবং রিভালদো প্লে-মেকার। কৌশল এবং মেধার দিক থেকে অন্য দুজনের চেয়ে একেবারেই আলাদা রোনালদো। তাকে বলা হতো ফুটবলের 'সর্বকালের সেরা' ফিনিশার। কোনো এক অলৌকিক শক্তিবলে ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টার আগেই বুঝে ফেলতেন কোথায় তাকে পাস দেওয়া হবে। রোনালদোর ক্যারিশমা ছিল ডি-বক্সে মধ্যে। তিন-চারজন ডিফেন্ডারকে অনায়াসে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়াতেন। এ কারণে ফুটবল বোদ্ধা এবং সমর্থকদের কাছে রোনালদো 'সর্বকালের সেরা' স্ট্রাইকার। যিনি 'দ্য ফেনোমেনন' নামেও পরিচিত।
ব্রাজিলিয়ান এই তারকা ১৯৯৮ এবং ২০০২ বিশ্বকাপেই বাজিমাৎ করেছেন। ফ্রান্সে ব্রাজিল শিরোপা জিততে না পারলেও সেরা ফুটবলারের পুরস্কার 'গোল্ডেন বল' জিতেন রোনালদো। কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে তো শিরোপার সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার 'গোল্ডেন বুট' পেয়ে যান তিনি। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। ক্লাব ফুটবলেও ছড়িয়েছেন দ্যুতি। ১৯৯৭ এবং ২০০২ সালে ইউরোপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার 'ব্যালন ডি'অর' জয় করেন। ক্লাব ফুটবলে রোনালদো ছিলেন 'হট কেক'। বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারে খেলেছেন ক্রুজিরো (১৯৯৩-৯৪), এইনডোভেন ১৯৯৪-৯৬), বার্সেলোনা (১৯৯৬-৯৭), ইন্টারমিলান (১৯৯৭-০২), রিয়াল মাদ্রিদ (২০০২-০৬), এসি মিলান (২০০৭-০৮) এবং করিন্থিয়ানসে (২০০৯-১১)। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে রোনালদো ৯২ ম্যাচে করেছেন ৬২ গোল। রিও ডি জেনিরোতে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তি স্ট্রাইকার ফুটবলকে চিরবিদায় জানান ২০১১ সালে।
রোনালদোকে বলা হয় বিশ্বকাপের 'মহানায়ক'। চার চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দু-দুবার (১৯৯৪ ও ২০০২) শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন। ১৫টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন রোনালদো-ই। তবে ব্রাজিলিয়ান তারকার এই রেকর্ড এখন প্রচ্ছন্ন হুমকির মুখে। বিশ্বকাপে ১৪টি গোল করে রোনালদোর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন জার্মানির ৩৫ বছর বয়সী তারকা স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসা। মাত্র দুটি গোল করলেই তিনি ছাড়িয়ে যাবেন রোনালদোকে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে রোনালদোর অভিষেক হয় ১৯৯৪ সালে, আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেও ১৭ বছর বয়সী রোনালদো ছিলেন। তবে কোনো ম্যাচ খেলেননি। ল্দনহো নামে চিহ্নিত ও রোনালি্দনহো গাওচো হিসেবে ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের প্রধান জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকে ব্রাজিলের প্রধান তারকা ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে ব্রাজিলের হয়ে চমক দেখিয়ে টানা দুবার ফিফার বছরের সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। '৯৮-এর বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে নিয়ে যান ফাইনালে। তবে সেবার তার দল স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হেরে গেলেও আসরে ৪ গোল এবং নজরকাড়া পারফরম্যান্সের জন্য সেরা খেলোয়াড় হন রোনালদো।
২০০২ সালের বিশ্বকাপে তো সম্পূর্ণ অন্য এক রোনালদোকে দেখে বিশ্ব। যেমন গতি তেমন আক্রমণাত্দক ভঙ্গি। রেকর্ড ৫ম বারের মতো ব্রাজিলকে বিশ্বকাপের ট্রফি এনে দেন। আর সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যান রোনালদো। ২০০৬ বিশ্বকাপটা ছিল তার জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। আবার রেকর্ডের বিশ্বকাপও। শরীরের ওজন বেশি হওয়ার কারণে গতি কমে যায়। কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা তো রোনালদোকে দলেই রাখতে চাননি। কিন্তু রোনালদোর মতো তারকাকে বাদ দেওয়ার মতো অত সাহসও ছিল না পেরেইরার। তবে ওই বিশ্বকাপে নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাননি ব্রাজিলিয়ান তারকা। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নিলেও ৩ গোলে করে গার্ড মুলারের ১৪ গোলের রেকর্ডকে ভেঙে ফেলেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, এখনো সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে সোনার হরফে লেখা রয়েছে রোনালদোর নাম।