ক্রিকেট বিশ্বে ছোট দলগুলোর রোল মডেল হতে পারে বাংলাদেশ। খাদে পড়ে যাওয়া একটি দল কীভাবে সদর্পে উঠে দাঁড়িয়ে আধিপত্য বিস্তার ক্রিকেট দুনিয়া মাত করে দেয়, তার বড় উদাহরণ তো বাংলাদেশই। একটু ভাবুন তো, ২০১৪ সালের কথা! একের পর এক হারতে হারতে ব্যর্থতার তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছিল। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার কাছে হোয়াইটওয়াশ, এশিয়া কাপে ব্যর্থতা, ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেও হোয়াইটওয়াশ। এমন ভাগ্য বিড়ম্বনায় পরে ইনচন এশিয়া কাপেও সোনা জিততে পারেনি টাইগাররা। ব্যর্থতার অতল গহ্বরে ডুবে যাওয়া সেই দলকে টেনে হিঁচড়ে সাফল্যের সিঁড়িতে তুলে আনলেন এক সারথি। তিনি বাংলাদেশের সাফল্যের নেপথ্য কারিগর কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অনেক মেধাবী সেটা দায়িত্ব নেওয়ার পরই বুঝে গিয়েছিলেন হাতুরা। দলে তিনি আহামরি কিছু পরিবর্তন আনেননি। শুধু খেলোয়াড়দের মানসিকতায় যে দুর্বলতা ছিল তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন। আর কোচের এই ছোট্ট পরিবর্তনেই বদলে যায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় দিয়ে সাফল্যের শুরু। তারপর বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা, পাকিস্তান-ভারতের পর সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। সেটাও কিনা সিরিজে পিছিয়ে পড়ার পর। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ সম্পর্কে হাতুরা বলেন, 'এখানে আমি কিছু করিনি, ছেলেরাই ফলাফলটা বদলে দিয়েছে। তবে প্রথমে দুই টি-২০ এবং একটি ওয়ানডে ম্যাচে হারার পর আমি ড্রেসিং রুমে ক্রিকেটারদের নিয়ে বসেছিলাম। ক্রিকেটারদের তাদের সামর্থ্য স্মরণ করে দিয়েছি। দলে যে সবার ভূমিকা আছে সেটাও মনে করে দিয়েছি। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জটা ভালোভাবেই নিয়েছিল তারা।'
বৃষ্টির কারণে টেস্ট ম্যাচ দুটি ড্র হলেও তাতে বাংলাদেশের গ্লানি থাকার কথা নয়। বরং আফসোস হতে পারে। কেননা প্রথম টেস্টে তো এগিয়ে ছিল বাংলাদেশই। দক্ষিণ আফ্রিকা কী দুর্দান্তভাবেই না চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু করেছিল। প্রথম টেস্ট নিয়ে কোচ বলেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন মধ্যাহ্ন বিরতির সময় ছেলেরা খুবই হতাশ ছিল। তা দেখে আমার মোটেও ভালো লাগেনি। এরপর আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে তো আমরাই ভালো করলাম। মজার বিষয় হচ্ছে, এই দলটার সামর্থ্য আছে কিছু করার। আমি শুধু ক্রিকেটারদের মানসিকতায় একটুখানি পরিবর্তন করে দিয়েছি।'
বাংলাদেশে এখন শুধু সিনিয়ররাই নন, দারুণ পারফর্ম করছেন জুনিয়ররাও। অভিষেক হতে না হতেই যেন ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের তরুণরা। সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম -কিছু দিন আগেও তাদের নাম কে জানতো। কিন্তু এখন রীতিমতো তারকা। তরুণদের দলে নেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সৌম্য সরকারকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে কোচ বলেন, 'তার মাত্র ১৩ রানের একটা ইনিংস দেখেই পছন্দ করেছিলাম। সেটা ছিল একটা প্রস্তুতি ম্যাচ। তার ব্যাটিং স্টাইল আমার পছন্দ হয়ে যায়। তারপর নির্বাচকদের বলি জিম্বাবুয়ে সিরিজে (ডিসেম্বর, ২০১৪) তাকে যেন সব ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সৌম্যকে নেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র শেষ ম্যাচে।'
বাংলাদেশের কোচের চাকরিটা ভীষণ উপভোগ করছেন হাতুরাসিংহে। কোচ বলেন, 'কোচিংয়ের দায়িত্বটাই অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমি কোচিং শুরু করেছি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে কাজ করে। এরপর শ্রীলঙ্কা। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের সময় আমি কানাডার কোচ ছিলাম। আমি অস্ট্রেলিয়া এ দল এবং নিউ সাউথ ওয়েলসেরও কোচ ছিলাম। আমি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। তবে এই চাকরিতে আমি খুবই খুশি। এখানকার ক্রিকেটাররা অনেক মেধাবী, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে।'
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সাফল্যের জোয়ারে ভাসলেও অনেকের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগেই সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার বয়কট বলেছিলেন, বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে ধারাবাহিক জিততে থাক। তখন দেখা যাবে কেমন করে।' কিন্তু নিজেদের ভালো দল হিসেবে প্রমাণ করতে বিদেশের মাটিতে ধারাবাহিক জিততেই হবে এমন ধারণাকে পাত্তা দেন না কোচ। এ প্রসঙ্গে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে হাতুরাসিংহে বলেন, 'বিশ্বে কোন দেশটা বিদেশের মাটিতে ধারাবাহিক জয় পায় বলুন তো?'