সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এসব ব্যবহার জীবনে অনেক ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। কিন্তু নেতিবাচক ঘটনাও ঘটছেন অহরহ। স্বাভাবিক জীবনযাপনকেও অস্থির করে দিচ্ছে এই মাধ্যমটি। তাই ঝামেলা মেটাতে গিয়ে বিচারপতিকে বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে, নো মোর ফেসবুক, নো মোর চ্যাট' (আর ফেসবুক নয়, আর চ্যাট নয়)।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী, দুই সন্তানের মাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ঘটনায় অভিযুক্ত এক যুবককে আগাম জামিন দিয়ে ওই মন্তব্য করেন।
৪০ বছর বয়সী এক নারী গত ১৭ ডিসেম্বর রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ করে জানান, সেখানকারই এক যুবক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে সহবাস করেছেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে রায়গঞ্জ পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবক বিবাহিত এবং তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। অভিযোগকারী নারীও বিবাহিত এবং তার দুই মেয়ে রয়েছে। ওই নারীর অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক জোর করে তার গর্ভপাতও করিয়েছেন। ওই যুবককে থানায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
চার বছর আগে ফেসবুকে তাদের পরিচয়। দুজনেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা। বহু বার ফেসবুকে তারা চ্যাট করেন। হোয়াটসঅ্যাপেও কথাবার্তা হত। এর পরে রায়গঞ্জ ও বেহালায় একাধিক বার দু’জন একসঙ্গে কাটিয়েছেন।পুলিশের কাছে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ জমা পড়ায় হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান ওই যুবক।
যুবকের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী দু’জনেই সাবালক। এই পরিস্থিতিতে ধর্ষণের অভিযোগ ধোপে টেকে না। তার মক্কেল একটি রাজনৈতিক দলের পদাধিকারী ছিলেন। তিনি দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ায় পুলিশ মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছে।
এ কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বাগচী যুবকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘এর মধ্যে রাজনীতির প্রসঙ্গ আসছে কীভাবে? যদি রাজনীতির প্রসঙ্গই তোলেন, তা হলে বলতে হয়, অবৈধ একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অভিযুক্তের জেলেই যাওয়া উচিত। এই ধরনের রাজনৈতিক নেতা হলে তার অনুগামীরা কী শিক্ষা পাবেন?
সরকারি আইনজীবী রুদ্রদীপ্ত নন্দী আগাম জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ওই যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বিচারপতি বাগচী মন্তব্য করেন, অন্য মামলার প্রসঙ্গই বা উঠছে কেন? এই মামলার সঙ্গে সেই সব মামলার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি?
পরে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, বিচার নিম্ন আদালতে হবে। অভিযুক্ত যুবক আগাম জামিন পাওয়ার যোগ্য। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া রায়গঞ্জ থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না।
অভিযুক্তের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বাগচীর পর্যবেক্ষণ, মাথায় রাখবেন, 'ওই নারীর সঙ্গে নো মোর ফেসবুক, নো মোর চ্যাট।' সূত্র : আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/২৬ জানুয়ারি, ২০১৮/ফারজানা