যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ সন্তানের এক পিতা বেপরোয়া হয়ে তার টি-শার্টে 'কিডনি চাই' বলে আবেদন জানিয়েছিলেন। তারপরই নিউইয়র্কে একটি হাসপাতালে তার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ওই পিতার জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
তার পরনের টি-শার্টটির ছবি সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লে প্রয়োজনীয় কিডনিটি তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন।
ওই পিতার নাম রবার্ট লেবোইৎস। থাকেন নিউজার্সিতে। চার বছর ধরে একজন কিডনি দাতার জন্যে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। হাসপাতাল বা অন্য কোনো জায়গা থেকে বহু চেষ্টা করেও তার সাথে ম্যাচ করে এরকম একটি কিডনি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন তিনি বিষয়টি নিজের হাতেই তুলে নেন।
তখন একটি টি-শার্টের পেছনে ও সামনের দিকে একটি শ্লোগান ছাপেন- 'একটি কিডনি প্রয়োজন।' তার নিচে নিজের টেলিফোন নম্বরও লিখে দেন তিনি। তারপরেই বদলে যায় সবকিছু।
গত সপ্তাহে তার শরীরে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন কিডনি-গ্রহীতা লেবোইৎস এবং কিডনি-দাতা রিচি সালি তাদের নিজ নিজ বাড়িতে সেরে উঠছেন।
রব লেবোইৎসের বয়স ৬০ বছর। তিনি বলেন, আমি শুধু আমার সন্তানদের সাথে আরও একটু বেশি সময় কাটাতে চেয়েছি। আর এখন আমি হয়তো আরও ২০ থেকে ২৫ বছর সময় পাবো। আমি কি রকম ফিল করছি সেটা আমি কথায় বোঝাতে পারবো না। আমার নায়ক হচ্ছেন রিচি সালি। মাত্র ১২ বছর বয়সে লেবোইৎসের কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়েছিল।
তারপর থেকে তার কিডনির অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে। মাত্র চার বছর আগে তাকে বলা হয়েছিল বেঁচে থাকতে হলে তাকে প্রত্যেক সপ্তাহে তিনবার কিডনি ডায়ালিসিস করাতে হবে। শুধু তাই নয়, শেষ পর্যন্ত তাকে তার কিডনিও প্রতিস্থাপন করতে হবে।
লেবোইৎসের রক্তের ধরন এবং যেহেতু তার দুই ছেলেরও কিডনি সমস্যা আছে তাই তারাও তাকে কিডনি দিতে পারবে না। তখন আমি মৃত ব্যক্তি যারা কিডনি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের তালিকা খতিয়ে দেখি। কিন্তু সেভাবে আমার সাথে ম্যাচ করে এরকম একটা কিডনি খুঁজে পেতে হলে হয়তো ১০ বছর সময় লাগতো।
তখন তিনি এই সমস্যা সমাধানের জন্যে অন্য একটি পথ খুঁজে বের করেন। নিজেকেই তখন তিনি একটি চলন্ত বিলবোর্ডে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
লেবোইৎস বলেন, আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে ডিজনি ওয়ার্ল্ডে যেতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু আমি তখন ভেবে দেখলাম আর কোথায় কোথায় আমি যেতে পারি যেখানে গেলে আরো বহু মানুষের সাথে আমার দেখা হবে।
তখন আমি টি-শার্টটি তৈরি করি।
কিন্তু সবকিছু বদলে যাওয়ার সূচনা ঘটে তখনই যখন একটি দম্পতি তার কাছে জানতে চান ফেসবুকে দেওয়ার জন্য তারা তার একটি ছবি তুলতে পারেন কিনা।
তারপর এক সপ্তাহের মধ্যে ওই টি-শার্ট পরিহিত তার ছবিটি ৯০,০০০ বারেরও বেশি শেয়ার করা হয়। এটা ছিল দারুণ এক ঘটনা। মাত্র সাতদিনে আমি ৩০০টির মতো কল ও টেক্সট ম্যাসেজ পাই বলেন লেবোইৎস। কিন্তু সালির ম্যাসেজ পেতে তার আরও একটু সময় লেগেছিল।
তারপর সালিসহ আরও তিনজনের শরীর পরীক্ষা করে দেখা হয়। তিনি ছাড়া বাকি সবাই বাতিল হয়ে যান বিভিন্ন মেডিকেল কারণে। শুধুমাত্র সালির সাথেই তার কিডনি ম্যাচ হয়।
তারপর ১৮ ঘণ্টার এক বাস ভ্রমণে সালি ইন্ডিয়ানা থেকে নিউইয়র্কে আসেন তার কিডনি দান করতে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করতে তখন দু'সপ্তাহের মতো সময় লেগেছিল। মানবিকতার নতুন এক নাম আমি খুঁজে পেয়েছি আর সেটা হলো রিচি সালি। কিডনি দান করার ব্যাপারে তিনি এখন লোকজনকে উৎসাহিত করতে চেষ্টা করবেন।
'আপনার যদি দুটো কিডনি থাকে, তার একটি আপনি দিয়ে দিতে পারেন। তারপরেও আপনি বেঁচে থাকতে পারেন ১০০ বছর। একই সাথে বাঁচাতে পারেন আরও একটি জীবন।'-বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/২৭ জানুয়ারি ২০১৮/আরাফাত