শুধু সৌদি আরবেই বাংলাদেশি ২৫ হাজার দক্ষ মহিলাকর্মীর চাহিদা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে নতুন শ্রমবাজার। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে ট্রেনিং সেন্টারের সংখ্যা ৪১টি থেকে বাড়িয়ে ৭১-এ উন্নীত করা হচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে মায়ানমারের ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বিদেশে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি।
মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যু না করার বিষয়ে নীতিগত কঠোর অবস্থানের ঘোষণাও দেন। শ্রমিকদের ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে জানিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার নিয়েও কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর মালয়েশিয়ার দু’টি ডেলিগেট টিম আমার সঙ্গে দেখা করেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে, আমি একটা হিসাব করেছি- সব মিলিয়ে ৬০ হাজার টাকা হলে একজন মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন। তাহলে নৌকায় করে গিয়ে কেন প্রাণ দিতে হবে?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে শিডিউল ব্যাংক করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রবাসীরা টাকা পাঠালে যাতে সেটা উঠানো যায়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া বিদেশ গমনেচ্ছুদের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ, স্মার্ট কার্ড ইস্যু এবং ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা যাতে চট্টগ্রামেও থাকে সেই পদক্ষেপও নেয়া হবে।
নূরুল ইসলাম বলেন, বিদেশে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের সরকারি অনুদান পেতে যাতে কোন ধরনের বিড়ম্বনা না হয়, সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদেশে গিয়ে গরমের মধ্যে পড়ে হিটস্ট্রোকে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকে মারা যান। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে দু’দিন অন্তর একটি-দু’টি করে লাশ আসে। ঢাকায় তো প্রত্যেকদিন আসে। বিমানবন্দরেই ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। কিন্তু তিন লক্ষ টাকা করে দেয়ার কথা। বাকি টাকা পেতে কিছুটা দেরি হয়। আমি নির্দেশ দিয়েছি, দুই মাসের মধ্যে যত পেন্ডিং আছে সব দ্রুত দিয়ে দিতে হবে। আগামীতে আর টাকা পেন্ডিং রাখা যাবে না।’
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে আমাদের চাকরির জায়গাটা দখল করছে। তাদের যদি পাসপোর্ট দেয়া না হত, তাহলে ওই জায়গায় আমরা থাকতাম। ‘আর রোহিঙ্গারা, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ঝগড়া করা, যেখানে-সেখানে গিয়ে তারা ঝগড়া করবে। তারা জনমগতভাবে উগ্র।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিচ্ছে কারা ? আমরাই তো ! ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানরা তাদের সনদ দিচ্ছেন। দুই-চার, পাঁচ-দশ হাজার টাকার জন্য তাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের যদি আমরা পাসপোর্ট না দিই তাহলে কি তারা আমাদের জায়গাটা দখল করতে পারত? আর বিদেশে গিয়ে তারা যেসব অপকর্ম করে সেগুলোর দায়ও তো আমাদের ঘাড়ে পড়ত না। ’
দক্ষ কর্মী গড়ে তোলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে গিয়ে লাভ কি? তারা যে বেতন পাবে সেটাতে তো কোন লাভ হয় না। আমরা দক্ষ শ্রমিক গড়ে তোলার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। নারী শ্রমিকদের খাদ্যাভাস, কাথাবার্তা-এসব বিষয়েও প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এক থেকে দেড় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিলেও হয়। সনদ থাকলে বিদেশে মূল্য আছে। সৌদি আরব বলে আমাকে ২০ হাজার কর্মী দাও। আমি দিতে পারছি মাত্র তিন হাজার। কারণ, এর চেয়ে বেশি আমার কাছে দক্ষ কর্মী নেই। মন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির লক্ষ্যেও তিনি কাজ করছেন জানিয়ে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় লোক দরকার। ঘাস কাটা, বেকারি শ্রমিক, ডাক্তার-নার্স তাদের দরকার। কিন্তু দক্ষ হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি-বিনা নোটিশে আমি ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে ঢুকে পড়ব। ঢাকায় এটা আমি করেছি। চট্টগ্রামেও করব। সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে হবে।
সভার আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইসহাক মিঞা, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ আগস্ট, ২০১৫/মাহবুব