কলকাতার ইডেন গার্ডেনে শেষ মুহূর্তে ঝড় তুললো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শিরোপা দখলের লড়াইয়ে শেষ সময়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় তা দেখিয়ে দিল ক্যারিবীয়রা। নারীদের পর পুরুষদের টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপাও ঘরে তুলে নিল গেইল-স্যামুয়েলসরা। জয়ের লক্ষে যখন এক ওভারে দরকার ১৯ রান, ঠিক সেই মুহূর্তে যেন জ্বলে উঠলো কার্লোস ব্রাফেটের ব্যাট। পরপর চার বলে চার ছক্কায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আর এই জয়ের মাধ্যমে একইদিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দু'টো শিরোপা দখলে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এদিন নারীদের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ধরাশায়ী করে শিরোপা জিতে নেয় ক্যারিবীয় নারীরা।
রবিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেনে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৫৫ রান করে ইংল্যান্ড। জবাবে শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। পুরো ক্রিকেটবিশ্বকে অবাক করে দিয়ে বেন স্টোকসের প্রথম চার বলে চারটি ছক্কায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মহাকাব্যিক জয় এনে দেন কার্লোস ব্রাফেট।
সুপার টেনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৩ রান তাড়া করতে নেমে ক্রিস গেইলের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ১১ বল আগেই জিতে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেক্ষেত্রে ফাইনালে ১৫৬ রানে লক্ষ্য ক্যারিবীয়দের জন্য খুব বড় হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ফাইনাল বলে কথা। নাটকীয়তা তো থাকতেই হবে। তাই তো ১৫৬ রান তাড়া করতে নেমে ১১ রান তুলতেই কমে যায় ৩টি উইকেট!
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জো রুটকে আক্রমণে এনেছিলেন ইয়ান মরগান। ব্যাট হাতে কার্যকরী ৫৪ রানের ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়া রুট বল হাতেও দেখালেন জাদু। নিজের প্রথম তিন বলের মধ্যেই ফিরিয়ে দিলেন দুই ওপেনার জনসন চার্লস ও গেইলকে।
রুটের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিডঅনে বেন স্টোকসের হাতে ধরা পড়েন চার্লস (১)। দ্বিতীয় বলে চার মেরেছিলেন গেইল। কিন্তু পরের বলে তিনিও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅফে ওই স্টোকসকে ক্যাচ দেন। সেমিফাইনালে ম্যাচজয়ী ৮২ রানের ইনিংস খেলা লেন্ডল সিমন্সও ফাইনালে ব্যর্থ। ডেভিড উইলির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান সিমন্স।
১১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে চতুর্থ উইকেটে ডোয়াইন ব্রাভোকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মারলন স্যামুয়েলস। খুব বেশি বাউন্ডারি মারতে না পারলেও রানের চাকা সচল রেখে ৪৭ বলে ফিফটি পূরণ করেন স্যামুয়েলস। এর পরেই ব্রাভোর বিদায়ে ভেঙে যায় ৭৫ রানের জুটি।
তখন জয়ের জন্য ৩৬ বল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে ৭০ রান। লিয়াম প্লাঙ্কেটের করা ১৫তম ওভারে স্যামুয়েলসের দুই ছক্কা ও এক চারে আসে মোট ১৮ রান। তবে পরের ওভারে ডেভিড উইলি তিন বলের মধ্যে দুই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান আন্দ্রে রাসেল (১) ও ড্যারেন সামিকে (২) ফিরিয়ে দিয়ে ক্যারিবীয়দের রানের গতি কমিয়ে দেন। এ ওভারে আসে ৭ রান।
ক্রিস জর্ডানের করা পরের ওভারেও আসে ৭ রান। ফলে শেষ তিন ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে ৩৮ রান। ক্যারিবীয়দের একমাত্র আশা তখন স্যামুয়েলসকে ঘিরেই। ১৮তম ওভারে আসে ১১ রান। অর্থাৎ শেষ দুই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন তখন ২৭ রান।
চেষ্টা করেও ১৯তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি। ফলে শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে ১৯ রান। গ্যালারি তখন একেবারে নিশ্চুপ। জয়ের পাল্লা উভয় দিকেই ঝুঁকছে। তবে ইংল্যান্ডের সমর্থকদের মধ্যে তখনো কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। কিন্তু না। স্টোকসের প্রথম চার বলে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে দেন কার্লোস ব্রাফেট।
এর আগে টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ওভারে ১৫৫ তোলে ইংল্যান্ড।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ