যে জলে আগুন জ্বলে, সেই জলের সন্ধান কবি হেলাল হাফিজ পেলেও পাচ্ছে না টিম টাইগার্স। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম এসেই শুনিয়েছিলেন ‘ইম্প্যাক্ট’ ক্রিকেটের গল্প। যেখানে ব্যক্তি নয় টিম অ্যাফোর্ড হবে বড় কথা। মানে কারো ৫০ বা ১০০ রানের ওপর দল ২০০ রানের টার্গেট দেবে না অথবা চেজ করবে না। বরং ‘দশে মিলে করি কাজ’ ফর্মুলায় লক্ষ্য দেওয়া কিংবা তাড়া করবে টাইগাররা।
তাতে যেমন ব্যক্তির ওপর চাপ কমবে, তেমন দলের বন্ধনও হবে দৃঢ়। শ্রীরামের এই ধারণা খুবই শ্রুতিমধুর, শুনতে ভালোই লাগে। তবে ঝামেলাটা এর বাস্তবায়নে। অনেকটা ইউটোপিয়ার মতো। কারণ ক্রিকেট দলের সবাই কার্যকর ভূমিকা রাখার নজির খুবই কম। বাংলাদেশের বেলায় তো এই ঘটনা আরও বিরল। একজন ভালো খেললে টাইগারদের আটজনই খারাপ খেলে।
এই পরিস্থিতে বলে কিংবা ব্যাটে কে কোথায় ভালো হবে, কার ওপর কোন জায়গায় ভরসা করা যাবে; সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেই আগানো জরুরি ছিল। সবগুলো মেকানিজমকে কাজ করাতে গিয়ে পুরো মেশিনটাই এখন অচল হয়ে পড়ছে।
ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচেও তার প্রমাণ পাওয়া গেল, ওপেনিংয়ে শ্রীরাম স্বীকৃত ‘ইম্প্যাক্ট’ ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্তকে নামানো হলো। কিন্তু খেললেন ১৫ বলে ১২ রানের ইনিংস। যা আজকাল টি-টোয়েন্টি তো দূরের কথা ওয়ানডেতেও দৃষ্টিকটু। সৌম্য সরকার আগের ম্যাচে তিনে নেমে ১৭ বলে ২৩ রান করলেও তাকে আনা হল ওপেনে। তিনি ৪ বলে ৪ করে কার্যকরিতা হারালেন। এখানেও পাস করতে পারলো না শ্রীরামের ইম্প্যাক্ট থিওরি।
যাক তারপরও পুরনো চাল ভাতে বাড়লো, তিনে নামা লিটন কুমার দাস ও চারে নামা সাকিব আল হাসান জুটি ৫৫ বলে ৮৮ রান তুলে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে দেয়। লিটন ফেরার পর আফিফকে নিয়ে আরও ৩৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সাকিব। এরপর আর কেউ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তাই তিনে মিলে কাজ হলেও দশে মিলে কাজ করার ইম্প্যাক্ট থিওরি কাজে আসছে না বলাই যায়।
তবে ব্যাট হাতে টাইগাররা যে ইম্প্যাক্ট রাখলো গাণিতিক হিসেবে বাজে বোলিংয়ের কারণে তা গেলো জলে। মোস্তাজিক বসিয়ে রেখে সিমিং কন্ডিশনে সাইফউদ্দিনকে দলে টানলেও তিনি একাই ৩.৫ ওভারে দিয়েছেন ৫৩ রান। সাথে ছেড়েছেন রিজওয়ানের ক্যাচও। যে রিজওয়ানের ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংই পাকিস্তানকে নিয়ে গেছে জয়ের দিকে। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের রোমাঞ্চে পাকিস্তান পেয়েছে ৭ উইকেটের বড় জয়।
সবমিলিয়ে দুই দিকে একসাথে ভালো খেলতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে ১৭৪ রানের টার্গেট দিয়েও জয় পাচ্ছে না টাইগাররা। আর কাজেও লাগছে না শ্রীরামের ‘জলে আগুন জ্বলানোর’ সূত্র। তার চেয়ে বরং পাঁচ বোলারের অন্তত ৪ বোলার ভালো করবে, ১০ ব্যাটারের অন্তত ৪ জন ভালো করবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই সূত্রে আগানোই ভালো নয় কী?
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল