রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণি কক্ষের বাইরে অন্য শিক্ষকদের নামে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। ওই বিভাগের ১১ জন শিক্ষক বিভাগের সভাপতির কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সোমবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাডেমিক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি। অন্যদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষকও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাত করে তার বিরুদ্ধে ‘আপত্তিকর’ কথা বলা হয়েছে অভিযোগ করে চিঠি দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের ১১ জন শিক্ষক সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে বলা হয়েছে, শিক্ষক রুখসানা পারভীন বিভিন্ন সময় শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণি কক্ষের বাইরে শিক্ষকদের নামে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেছেন মর্মে অভিযোগ আনা হয়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার সকাল ১১টায় একাডেমিক কমিটির তলবী সভা আহবান করা হয়।
সোমবার শিক্ষকরা সভায় আসলেও আরেকটি নোটিশের মাধ্যমে বিভাগীয় সভাপতি শিক্ষকদের জানান, উপ-উপাচার্যের মৌখিক নির্দেশের ভিত্তিতে সভা স্থগিত করা হয়েছে। তবে অভিযোগকারী শিক্ষকরা জানান, তারা উপ-উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, তিনি এ ধরনের কোন নির্দেশ দেননি। সভাপতির সঙ্গে রুখসানা পারভীনের ভালো সম্পর্ক থাকায় সভাপতি এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগকারী শিক্ষকদের পক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম আমিনুর রহমান, অধ্যাপক রুহুল আমিন, অধ্যাপক এস এম রাজী ও অধ্যাপক কফিলউদ্দিন আহমেদ জানান, শিক্ষকদের নামে যদি রুখসানার কোন অভিযোগ থাকে তবে বিভাগের মাধ্যমে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সমাধান করতে পারতো। শ্রেণি কক্ষে ও শ্রেণি কক্ষের বাইরে ‘কুরুচিপূর্ণ’ ও ‘মানহানিকর’ কথা বলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করার দরকার ছিল না। আর সভাপতি নিজেও মিথ্যা কথা বলে সভা বাতিল করলো। এটাও অনৈতিক।
জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাসিমা জামান বলেন, ‘আমাকে উপ-উপাচার্য বলেছিলেন আমি যেন উপাচার্যের সাথে কথা না বলে সভা না করি। তার সেই কথাই আমি নির্দেশনা আকারে নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু শিক্ষকরা উল্টো বুঝেছেন। আমি প্রশাসনের সাথে দেখা করে তদন্ত কমিটি চেয়েছি। প্রশাসন বিষয়টি দেখবে বলে কথা দিয়েছেন।’
এদিকে রুখসানা পারভীনের নামেও শিক্ষকরা ‘মানহানিকর’ তথ্য ছড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে তদন্ত কমিটির দাবি জানিয়েছেন।
রুখসানা পারভীন বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে সাক্ষাত করে প্রতিকার চেয়েছি। তদন্ত কমিটিও দাবি করেছি। আমার সঙ্গে অনেক কিছু করা হয়েছে। যা এখন আমি বলতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি গঠন করলে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সব জবাব দিবো।’
এই ঘটনায় দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করেছে বিভাগে। ক্লাসও অনুষ্ঠিত হয়েছে খুব কম। শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। দফায় দফায় সভা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে সাক্ষাত করেছেন অভিযোগকারী ১১ জন শিক্ষক। প্রশাসনের সাথে দেখা করেছেন বিভাগীয় সভাপতি ও রুখসানা পারভীনও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘বিভাগের সভাপতি যে বলছে আমি সভা বন্ধ করতে বলেছি, সেটা আসলে ঠিক না। আমার সাথে তার এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। তবে পরিস্তিতি সামাল দেওয়ার জন্য তিনি আমার নাম সভা স্থগিতের নোটিশে ব্যবহার করেছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান জানান, ‘আমি সময়ের অভাবে তাদের সাথে দেখা করতে পারিনি। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপ-উপাচার্যকে। তিনি সব পক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন