অবশেষে ইউরোপ সফর বাতিল করলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি প্রফেসর ড. এ এইচ এম মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট কেনার কাজে চলতি মাসের ২০ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের টাকায় সুইজারল্যান্ড ও স্পেন সফরের কথা ছিল ভিসিসহ ৯ জনের একটি দলের।
তবে ভিসার জন্য সুইজারল্যান্ড দূতাবাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে ৯ জনের অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছিল, তাতে উপাচার্যের নামও ছিল। যদিও এখন আর তিনি যাচ্ছেন না বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে বাকি আটজন যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
সেই আটজিন হলেন- ট্রেজারার প্রফেসর মো: জালাল উদ্দিন, রেজিষ্টার ড. মো: হুমায়ুন কবির, প্রক্টোর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ইঞ্জি. মো: হাফিজুর রহমান, সহকারি প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো: মাহবুবুল ইসলাম, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এর সহযোগী অধ্যাপক সোহেল রানা, কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো: শাহাবুদ্দিন ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. সুব্রত কুমার দে। এদের মধ্যে আবার ছয় জনেরই নেই লিফট সম্পর্কে কোনা কারিগরি জ্ঞান।
তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই সফরের বিষয়টি প্রকল্প প্রস্তাবেই ছিল। ওই কোম্পানির কারখানা সুইজারল্যান্ডে। আর চালান হবে স্পেন থেকে। এ জন্যই আমরা ওই দু’দেশে যাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের এমন বক্তব্যের পর অনেকেই বলছেন, কলা অনুষদ অথবা ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষকরা লিফট সম্পর্কে কী জ্ঞান রাখে? ইউরোপ ভ্রমণ ছাড়া এ সফরের আর কোনো মাহাত্ম নেই। আর যদি সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানই ইউরোপ যাত্রা বিনামূল্যে করিয়ে থাকে তাহলে আগেই এর খরচ পকেটে তুলেছে ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন কয়েকটি বহুতল ভবনের জন্য ১৫টি লিফট কেনার জন্য দরপত্র পায় ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স। একেকটি এক হাজার ও সাড়ে বারো’শ কেজির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। মোট খরচ পড়ছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এগুলো কেনা হচ্ছে শিন্ডলার এলিভেটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। আর এটি সরবরাহ করছে মেসার্স ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। প্রাক চালান পরিদর্শন বা প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন হিসেবে এখন ৬ শিক্ষক ও দুই প্রকৌশলী ২০ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সুইজারল্যান্ড ও স্পেন সফর করবেন। এ সময় তাদের বিমান ভাড়া থেকে যাবতীয় ব্যয় বহন করবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি।
এ নিয়ে গত শুক্রবার পাঠক নন্দিত শীর্ষ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় ‘লিফটের জন্য-সুইজারল্যান্ড-স্পেন সফর’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রথম পাতায় প্রতিবেদন ছাপানো হয়। ওইদিনই বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট কাণ্ড নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে। এরপর থেকেই ওই সফরে থাকা সবাই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ভাইরাল হয় খবরটি। ফেসবুকের পেইজে পেইজে, নিজস্ব টাইমলানে অথবা বিভিন্ন গ্রুপে হাস্যরস করে অনেকে শেয়ারও করেন। বড় হতে থাকে মন্তব্যের ঝুড়ি। এমন পরিস্থিতিতে নিজের ইউরোপ যাত্রা বাতিল করেন ভিসি।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজে শামিমুল হক নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘সফরের ব্যয় এখন ঐ লিফট সরবরাহককারী প্রতিষ্ঠানটি বহন করলেও লিফটের দামের তা নিশ্চয়ই সমন্বয় করবে। তার অর্থ হল, টাকাটা সরকার তথা জনগনের পকেট থেকেই যাচ্ছে।’
সানাউল করিম লিখেছেন, ‘সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের লাভ কি নয় জন লোককে ইউরোপে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। নিশ্চয়ই ডাল মে কুচ কালা হে।’
যে হারে সরকারি কর্মকর্তারা বিশ্ব ভ্রমনে বের হইছে তাতে ইবনে বতুতাকেও হার মানাবে। হরিলুট কতদিন চলবে-এমন প্রশ্ন রেখে তমাল আহমেদ টিপু নামের অপর একজন প্রতিবেদনটি শেয়ার করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ