জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কনসার্ট দেখতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক বহিরাগত। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে অর্ধনগ্ন করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
গত সোমবার (৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ এবং সপ্তম ছায়ামঞ্চ সংলগ্ন এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ওইদিন রাতে মুক্তমঞ্চে পাবনা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল অ্যাশেজ ও কুঁড়েঘর। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বহিরাগতদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বহিরাগতদের কয়েকজনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে বাকবিতন্ডার মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে পরে বহিরাগতদের শনাক্ত ও মারধরের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিসান, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের রিফাত, ইতিহাস বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সিদ্ধার্থসহ কয়েকজনের একটি দল বহিরাগতদের মারধর করে। এসময় বহিরাগতদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
একইসময়ে, ৫০তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফের বন্ধুদের দুইটি বাইক কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে জোরপূর্বক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এবিষয়ে আলিফ বলেন, আমি আর আমার এলাকার তিন বন্ধু কনসার্ট দেখতে যাই। তখন বহিরাগতদের মারধর শুরু করলে ওরা ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ১৫-২০ মিনিট পর গিয়ে দেখি আমাদের বাইক দুইটি নেই। মাঝমাঠে এসে বাইকগুলো দেখতে পেলেও বঙ্গবন্ধু হলের কয়েকজন সিনিয়র সেগুলো নিয়ে যায়। এরপর পরিচিত এক ভাইয়ের সহায়তায় আমার বন্ধুরা বাইক ফিরে পায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের মুন্নাকে কনসার্ট দেখতে আসা বহিরাগতদের পরিচয় জিজ্ঞেস করতে দেখা গেছে। বহিরাগতকে পেলেই ইচ্ছামতো পিটিয়ে বাইরে বের করে দেন তারা। পরে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন।
এ বিষয়ে সুদীপ্ত শাহীন বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি তারা প্রাইভেটকারের যাত্রীদের মারধর করে তাদের জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানিয়েছি।
গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আসা রিয়াদ হোসেন বলেন, কুঁড়েঘর ব্যান্ডের পেজে অনুষ্ঠানের কথা জানতে পেরে পাঁচ বন্ধু জাহাঙ্গীরনগরে চলে আসি। কনসার্ট চলাকালে কিছু শিক্ষার্থী পেছন থেকে আমাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করে। বহিরাগত হওয়ায় তারা আমাদের এলোপাতাড়ি মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।
কনসার্টে আসা ধামরাই সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাওসার তাকে মারধরের পর কয়েকজন ছাত্ররা তার মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় বলে জানান।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত মাকের্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি মারধর করেছি। কিন্তু আমি কারও মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেইনি।
অন্য অভিযুক্ত রিসান, মুন্না এবং সিদ্ধার্থ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এ প্রতিবেদকের কাছে আসা অডিওতে সিদ্ধার্থকে নিজেই তার পরিচয় দিতে শোনা যায়।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু ঘটনাটির সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো জানতে পারিনি। এবিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগও করেনি। অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সুন্দর পরিবেশ দেখতে চাই। ইদানীং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের উৎপাতও অনেক বেড়ে গেছে। তারা ক্যাম্পাসে এসে অপরাধমূলক কাজ করছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাদেরও দোষ রয়েছে। আমরা রাত ১০ টার পরে অনুষ্ঠান চালাতে নিষেধ করলেও অনেক বিভাগ, জেলা সমিতি, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিয়ম মানছে না। তারা বড় বড় ব্যান্ড-তারকা নিয়ে এসে রাতভর গানবাজনা করে। এসবের সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই সংশ্লিষ্ট থাকেন। তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুন্দর পরিবেশ আশা করা যায় না।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ