রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আজ বিশ্ব পরিমণ্ডলেও তাদের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলেছেন। সেবা ও কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা জনগণের শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং সমগ্র জাতির আস্থা অর্জন করেছে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের জনকল্যাণমূলক কাজে অবদান রাখতে হবে। একজন ভালো সৈনিক, আমৃত্যু সৈনিক। সৈনিক জীবনে শৃঙ্খলাবোধ আর আনুগত্যের বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, সেনাবাহিনী একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে আনুগত্য ও পেশাদারিত্ব মূল্যবান সম্পদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী সেনানিবাসে ‘বাংলাদেশ ইনফ্যান্টি রেজিমেন্ট সেন্টারে’র দ্বিতীয় বীর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার বিষয়। বর্তমান সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ এর আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রস্তুত করা হয়েছে। ফোর্সেস গোল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়ন প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিগত বছরে ১০ পদাতিক ডিভিশন, ৯৭ পদাতিক ব্রিগেড এবং ১০ আর্টিলারি ব্রিগেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদী সংলগ্ন এলাকায় লেবুখালী সেনানিবাস স্থাপন, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাধীন পদ্মাসেতু এলাকায় সেনানিবাস স্থাপনের লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান আছে। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলাধীন স্বর্ণদ্বীপ এলাকায় সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামাইনে একটি সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সাংগঠনিক পরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সমর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুবিধ সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি দক্ষ ও পেশাদার বাহিনী গঠনে আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা অনস্বীকার্য। সে লক্ষ্যে সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। রিক্রুট ও প্রশিক্ষণকে আরও আধুনিকায়ন এবং যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেনা সদস্যদের উচ্চ শিক্ষারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন সেনাবাহিনীর সব সদস্য ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা অর্জন করছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। সেনাসদস্য এবং পরিবারবর্গের সুচিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সামরিক হাসপাতালের জনবল কাঠামো এবং বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল স্থাপন, বিভিন্ন সেনানিবাসে বিশেষ শিশুদের জন্য ‘প্রয়াস’ স্কুল স্থাপন সেনাবাহিনীর জন্য বর্তমান সরকারের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। এছাড়াও কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সদস্যদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি উন্নয়নের এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে, যা সেনা সদস্যদের মনোবলের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে ও তাদেরকে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ মাতৃকার কাজে মনোনিবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
এর আগে দুপুর ১টায় দিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উপস্থিত হন। পরে তিনি প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, নিরাপত্তা উপদেষ্টা, নৌ বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য ও উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।